সোনালি আঁশ পাট: পর্ব-২

চাষাবাদঃ১

রোপনের সময়ের ওপর ভিত্তি করে তোষা পাটকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। বৈশাখমাসি (১৫ থেকে পরবর্তী সময়) জাত, যথাঃ ও-৪ এবং ফাল্গুন-চৈত্রমাসি (১০ মার্চ থেকে পরবর্তী সময়) জাতঃ ও-৯৮৯৭ এবং ওএম-১।

বৈশাখমাসি (১৫ থেকে পরবর্তী সময়) জাতঃ ও-৪

১৯৬৪ সালে আমাদের দেশে প্রথম উদ্ভাবন হয়। সাধারণত বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শেষ পর্যন্ত প্লাবনমুক্ত উঁচু জমিতে এ পাট রোপণ করা হয়। এ পাট গাছের রঙ সম্পূর্ণ সবুজ। পাতা আকর্ষণীয় লম্বা ও চওড়া। এ পাটের আঁশ সব দেশি আঁশের চেয়ে অনেক উন্নত ও দাম অনেক বেশী। সময়মতো রোপন ও পরিচর্যা করলে প্রতি হেক্টর জমিতে ৪.৫১ মেট্রিক টন (একর প্রতি ৪৯ মণ) পাট উৎপন্ন হয়।

ফাল্গুন-চৈত্রমাসি (১০ মার্চ থেকে পরবর্তী সময়) জাতঃ ও-৯৮৯৭

এ জাতের পাট সাধারণত ফাল্গুন মাসের শেষদিকে ও চৈত্র মাসের প্রথমদিকে রোপন করা হয়। এ পাট সাধারণ ও-৪ এর মতো হয়, তবে উচ্চতা ৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এ পাটের উৎপাদন সবচেয়ে লাভজনক। রোপনের দিন থেকে ১২০ দিনে এ পাট কাটা হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে ৪.৬১ মেট্রিক টন (একর প্রতি ৫০ মণ) উৎপন্ন হয়। এ পাটের আঁশ পৃথিবীতে অন্যান্য জাতের পাট অপেক্ষা বেশী উন্নত ও সমাদৃত।

ফাল্গুন-চৈত্রমাসি (১০ মার্চ থেকে পরবর্তী সময়) জাতঃ ওএম-১

ফাল্গুনের শেষ সপ্তাহ থেকে এ পাট বপন করা হয়। এ পাট গাছ সাধারণত লম্বা, সুঠাম এবং দ্রুত বাড়ন্ত। গাছের কান্ড ঘন সবুজ। পাতার আকার তুলনামূলকভাবে বড় এবং রঙ ঘন সবুজ মসৃণ ও চকচকে। এর আঁশের রঙ ও মান উন্নত। প্রতি হেক্টর জমিতে ৪.৮২ মেট্রিক টন পাট উৎপাদন হয়।

দেশি পাটঃ

জমিতে বীজ বপন সময়কাল এবং পাট কাটার সময়ের ওপর নির্ভর করে দেশি পাটের জাতকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে।

দেশি আশু বপন উপযোগী জাত ও দেশি নাবি বপন উপযোগী জাত

দেশি আশু বপন উপযোগী জাতঃ

সিসি-৪৫:

এ জাত  ফাল্গুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে চৈত্রের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বপনকাল। এ জাতের পাট কেটে রোপা আমন ধান রোপন করা হয়। এ পাট সাধারণত ৩.০০-৩.৫০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর কান্ড সম্পূর্ণ সবুজ। প্রতি হেক্টর জমিতে ৫.১৬ মেট্রিক টন (একর প্রতি ফলন ৫৬ মণ) উৎপাদন হয়।

বিজেসি ৭৩৭০(বিজেআরআই দেশি)ঃ

চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এর বপনকাল। এ পাট দ্রুত বর্ধনশীল। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ৫.৪৬ মেট্রিক টন।

দেশি নাবি বপন উপযোগী জাতঃ

সিভিই-৩:

চৈত্র মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সারা চৈত্র মাস বপন এর আসল সময়। সাধারণত ৩.০০-৩.৫০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পরিণত বয়সে এর মাথায় শাখা-প্রশাখা সৃষ্টি এবং তামাটে রঙের হয়ে থাকে। প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদনের পরিমান ৪.৫১ মেট্রিক টন।

বিজেসি-৩:

চৈত্রের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এ পাট বপন করা হয়। গাছের সর্বাঙ্গ সবুজ, পাতা সিডিএল-১ জাতের চেয়ে সরু ও ঢেউ খেলানো। অন্যান্য জাতের চেয়ে এক মাস আগে কাটা হয়। এ জাতের পাট থেকে প্রতি হেক্টরে ৪.৭২ মেট্রিক টন আঁশ পাওয়া যায়।

সিভিএল-১:

চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত এ পাট বপনের সময়। এ জাত সাধারণত ১২২-১৩২ দিনে কাটা যায়। প্রতি হেক্টর জমিতে ৫.১৬ মেট্রিক টন আঁশ পাওয়া যায়।

কেনাফঃ

এইচসি-২ সাধারণত ফাল্গুন মাসের শেষ থেকে চৈত্র মাসের মধ্যে এ জাত বপনের আসল সময়। এ জাত সাধারণত ৬.৭০ মিটার লম্বা হয়। উপযুক্ত পরিচর্যায় এর হেক্টর প্রতি ফলন হয় ৬.৬৩ মেট্রিক টন বা একর প্রতি ৭২ মণ।

এইচসি-৯৫:

এ জাতের পাটের বপন সময় ১ চৈত্র থেকে ১ বৈশাখ। দেশের উত্তরাঞ্চলে এ জাতীয় পাট বেশী উৎপাদন হয়। এর ফলন প্রতি হেক্টর জমিতে ৩.১১ মেট্রিক টন।

ফাল্গুন ও চৈত্র মাস এর বপনযোগ্য সময়। সাধারণত বেলে ও বেলে দোআঁশ মাটিতে এ জাতের পাট উৎপন্ন হয়। উপযুক্ত পরিচর্যা ও পরিবেশ পেলে ১৯ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে ৪.৭০ মেট্রিক টন পাট উৎপাদিত হয়।

রবি ফসল তোলার পরপরই জমি চাষ করা উচিত। যদি চাষ দেয়া না যায়, তবে মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি হলেই জমি চাষ দিতে হবে। পাটের প্রকার ভেদে আড়াআড়ি ৫-৬ বার কিংবা প্রয়োজনবোধে তার চেয়ে কম অথচ গভীরভাবে চাষ করা প্রয়োজন। পাটের বীজ আকারে ছোট তাই জমির মাটি মই দিয়ে মিহি করে আগাছামুক্ত না করলে আশানুরুপ বীজ গজাতে পারে না। বেলে বা দোআঁশ মাটি অপেক্ষা এঁটেল মাটি ভালোভাবে চাষ করতে হয়। যেহেতু কেনাফ ও মেস্তার বীজ আকারে বড় তাই অন্যান্য পাটের মতো এত মিহি চাষের দরকার হয় না।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *