বাঘ বিপন্ন হলে সুন্দরবন বিপন্ন হবে, বাঘ রক্ষা করে সুন্দরবন রক্ষা করি

আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হ’ল ‘বাঘ বাংলাদেশের জাতিয় গৌরব।’ মূলত প্রতি বছর ২৯ জুলাই সারা বিশ্বে বাঘ দিবস পালিত হয়, তবে এ বছর ঈদুল-ফিতর’র ছুটি থাকায় ৭ জুলাই দিবস টি পালিত হচ্ছে।

শুনতে অবাক লাগলেও সারা বিশ্বে বাঘ আজ বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী! আর সে কারণেই বাঘকে রক্ষা করার জন্য বিশ্ববাসির কাছে আবেদন জানাতে,বাঘের প্রতি তাদের সহমর্মিতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বাঘ দিবস পালন করা হয়।

বর্তমানে বিশ্বের মাত্র ১৩ দেশে বাঘ পাওয়া যায়। দেশগুলি হ’ল বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড,কম্বোডিয়া,লাওস,ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া,মালয়েশিয়া,চীন,ভূটান,নেপাল ও রাশিয়া। এই দেশগুলিতে ১৯০০ খৃষ্টাব্দেও বাঘের সংখ্যা ছিলো প্রায় ১,০০,০০০টি। মাত্র এক শ’ বছরের ব্যাবধানে সারা পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা এখন মাত্র ৪০০০টি ! এভাবে চলতে থাকলে মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই পৃথিবী থেকে বাঘ নামক প্রাণীটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা আছে, কারণ ইতিমধ্যেই একাধিক প্রজাতির বাঘ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যে সকল প্রজাতির বাঘ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেগুলি হ’ল – বালিনীজ টাইগার, জাভানীজ টাইগার ও কাম্পিয়ান টাইগার, যাদের দেখা আর কখনও মিলবে না।
এ রকম এক বাস্তবতায় ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে উল্লিখিত ১৩টি দেশের সরকার প্রধাণদের সম্মেলনে বাঘ সংরক্ষণকে বেগবান করার জন্য ঘোষণাপত্র তৈরী হয়। উক্ত ঘোষণাপত্রের আলোকে প্রতিবছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হয়।
বাঘ অধ্যুসিত বনে বাঘ বনের জীব-বৈচিত্র্য,খাদ্য শৃঙ্খল ও প্রতিবেশ চক্রের প্রধান নিয়ন্ত্রক। বাঘ বন রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী এবং একটি বনের জীব-ঐবচিত্র্যের স্টাটাস নিরূপনের ইন্ডিকেটর প্রজাতি। বর্তমানে বাঘ মহাবিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসাবে চিহ্নিত। ১৩টি টাইগার রেঞ্জ দেশ বাঘ সংরক্ষণের জন্য ন্যাশনাল টাইগার রিকভারি প্রগ্রাম ও গ্লোবাল টাইগার রিকভারি প্রগ্রাম বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে পৃথিবীর সর্বাধিক সংখ্যক বাঘ, প্রায় ১৭০০টি ভারতের ৫৬টি বনাঞ্চলে বাস করে।
গত ২০০০-২০১২সারের মধ্যে ১৩টি টাইগার রেঞ্জ দেশে ৬৫৪টি বাঘের চামড়া ও হাড়গোড় জব্দ করা হয়েছে। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে, এ সময়ের মধ্যে প্রায় ১৪২৫টি বাঘ হত্যা করা হয়েছে।
শত প্রতিকুলতার মধ্যেও বাংলাদেশের সুন্দরবনে প্রায় ৩০০-৪৪০টি বাঘ আছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র। বিগত ২০০৪ সালে ইউএনডিপি,বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেসজ্ঞদের সহয়তায় বাঘের পদচিহ্ন জরিপ করে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ৪৪০টি। এর মধ্যে পুরুষ বাঘ ১২১টি, মা বাঘিনী ২৯৮টি ও বাচ্চা বাঘ ছিলো ২১টি। বাংরাদেশের সুন্দরবনের আয়োতন ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার। এই বনঞ্চলে বাঘের ঘনত্ব পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক। বাংলাদেশের সুন্দরবনে প্রায় সব বয়সের বাঘের সন্ধান পাওয়া যায়, এ কারণে মনে কার হয় যে এ বনে বাঘের জীবন যাত্রা এখনও মোটামুটি স্বাবাবিক আছে। এর পাশাপাশি এমন ধারনাও প্রচলিত আছে যে চোরা শিকারী বা বাঘ ডাকাতরা প্রতি বছর বাঘ হত্যা করে এর চামড়া ও হাড় পাচার করছে এবং এদের সহয়তা করছে সুন্দরবনের তথাকথিত ডাকাতরা।
এত কিছুর পরও যে আইন ২০১২ সালে প্রণয়ন হয়েছে তাতে বাঘ হত্যাকারীর সর্বোচ্চ জেল ৭ বছর এবং সর্বনিম্ন ২ বছর ও সর্বোচ্চ জরিমানা ১০ লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১লাখ টাকা, যা বাঘ হত্যা প্রতিরোধে আদৌ কোন কঠোর আইন নয়। বাঘ হত্যা প্রতিরোধে আরও কঠোর আইন প্রয়োজন।
বর্তমানে বন বিভাগের উদ্যোগে ভারতের ওয়াইল্ডলাইফ ইনষ্টিটিউট’র সহয়াতায় ক্যামেরা ট্রাপের সাহায্যে বাঘ গননা চলছে। এ উদেশ্যে সুন্দরবন কে তিন টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এগুলি হ’ল সুন্দরবন পূর্ব ব্লক (সুপতি-কচিখালী-কটকা), সুন্দরবন পশ্চিম ব্লক (সাতক্ষীরা) ও সুন্দরবন মধ্যব্লক (খুলনা)। ইতোমধ্যে দু’টি ব্লকের জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে জরিপের কাজ সম্পন্ন হলে বর্তমানে সুন্দরবনে কতগুলি বাঘ আছে সেটা হয়তো জানা সম্ভব হবে।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ ,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *