খুলনাবাসির দুই যুগের আন্দোলনের ফসল বহু কাঙ্খিত জেলা শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে আজ। খুলনা মহানগরীর শের-এ-বাংলা সড়কের নির্ধারিত স্থানে ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উন্মোচন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
তিনি বলেন, একটি জাতির মূল পরিচয় হ’ল তার সংস্কৃতি বা রীতি-নীতি ও কৃষ্টি যা শত শত বছর ধরে গড়ে ওঠে। আর একটি জাতির মৌলিক বিকাশে তার সংস্কৃতির চর্চা প্রধান ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ, শিশুরা সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হলে জতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে। বর্তমানে শিশুদের শিক্ষা নিয়ে অসুস্থ্য প্রতিযোগীতা চলছে, যে করেই হোক তাদের জিপিএ-৫ পেতে হবে! তিনি প্রশ্ন করেন যারা জিপিএ-৫ পাবেনা তারা কি রাষ্ট্র ও সমাজের কোন কাজে লাগবে না ? যারা খেলাধুলা, সঙ্গিত, নাট্যচর্চার মাধ্যমে দেশে আজ প্রতিষ্ঠিত তারা সকলেই কি জিপিএ-৫ পেয়েছে ? তিনি বলেন, শিশুদের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে তাদের স্বাভাবিক জীবন ধ্বংস করা হচ্ছে যা তাদের ফার্মের মুরগীতে পরিণত করছে, এটা কোন ভালো লক্ষণ নয়। শিশুদের খেলাধুলা, কবিতা, নাটক, গান সহ মুক্ত পরিবেশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে তাদের সাংস্কৃতিবান মানুষ বানানো যাবে না।
তিনি বলেন, জীবনের সাফল্য নানা ভাবে আসতে পারে। শিশুদের মুক্ত জীবনের স্বাদ দিতে হবে অন্যথায় শিল্পকলা একাডেমি ব্যবহারের মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আলোর মানুষ সৃষ্টি করতে হলে সাংস্কৃতিবান মানুষ সৃষ্টি করতে হবে এবং তা করতে হবে শিশুকাল থেকেই। দেশের ভবিষ্যৎ আলোক বর্তীকা হিসেবে শিশুদের গড়ে তুলতে হবে, যারা দেশের সাংস্কৃতির মশাল বাহক হিসেবে দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সংস্কৃতির চর্চা তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। সংস্কৃতির চর্চাই মানুষকে বুদ্ধিদীপ্ত ও যুক্তিনির্ভর করে। সুস্থ্য সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমেই সামাজিক নৈরাজ্য দূর করা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, খুলনা জেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ হারুনুর রশিদ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.মুহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনিছুর রহমান বিশ্বাস, গণপূর্ত বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জি এম এম কামাল পাশা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল। স্বাগত বক্তৃতা করেন শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেন মিন্টু।
উল্লেখ্য, ৮১ শতাংশ জমির উপর প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স। প্রথম পর্যায়ে ছয়তলা বিশিষ্ট কমপ্লেক্সের চারতলা নির্মিত হবে। এর অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে পুকুরের পানির মধ্যে ভাসমান মুক্তমঞ্চ। এতে থাকবে ৫শ আসন বিশিষ্ট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল অডিটোরিয়াম, সুদৃশ্য বিশাল লবি, দোতলায় আর্ট গ্যালারি এবং ক্যান্টিন। এ ছাড়াও থাকবে প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র, প্রশাসনিক ও প্রশিক্ষণ ভবন ও হলরুম। ১৭ হাজার বর্গফুট আয়োতনের এ ভবনের নির্মাণ কাজ ১৬ মাসের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ