কোটি কোটি টাকা খরচ করে ত্রুটিপূর্ণ নকশায় সামঞ্জস্যহীন ব্রীজ নির্মানের মাধ্যমে খুলনা নগর সংলগ্ন ময়ূর নদী হত্যার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে। সেই সাথে পরিবেশ বিপর্য়য়ের হাত থেকে নগরীকে বাঁচাতে কোটি কোটি টাকায় ময়ূর নদী খননের যে কাজ চলছে তার কার্যকরিতা হয়ে পড়েছে প্রশ্নবিদ্ধ, এবং ময়ূর নদীর পাড়ে চলমান লিনিয়ার পার্ক নির্মাণের পূর্ব পরিকল্পনা গেছে ভেস্তে!
উল্লেখ্য, খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক ময়ূর নদীর উপর গল্লামারীতে ত্রুটিপূর্ণ নকশায় অপরিকল্পিত এক ব্রীজ নির্মণ করায় নদী পাড়ে চলমান সকল প্রকল্পের পূর্ব-পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়েছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনাবিদদের।
একদা স্রতস্বিনী স্বচ্ছ পানির আধার খুলনা মহানগর সংলগ্ন ময়ূর নদী এখন গণ অত্যাচারে মূমুর্ষূ, মৃত প্রায়। সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, আলুতলা স্লুইস গেইট’র (যেখানে ময়ূর নদী রূপসা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে) নিকট থেকেই শুরু হয়েছে নদী জবরদখল। তবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের চক্ মথুরাবাদ মৌজা থেকে রায়ের মহল হামিদ নগর স্লুইস গেইট পর্যন্ত দুই পাশের নদী ব্যাপক ভাবে জবরদখল করে নেয় নদীসন্ত্রাসী ভূমীদস্যুরা, ফলে নদী এখানে সংকির্ণ খালে পরিণত হয়েছে।
নদীসন্ত্রাসীরা নদী দখল করে গড়েতোলে মাছের ঘের, ফসলী জমি ও বসতবাড়ী। নদী মরে যাওয়ায় সবচেয়ে বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়েছে নদীর দুই পাড়ের গ্রামবাসী, কারণ তাদের দৈনন্দিন জীবন ও চাষাবাদের প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা মেটাত এই নদী।
এক সময় নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও ময়ূর নদী বাঁচাতে নাগরীক সমাজ গড়েতোলে গণ-আন্দোলন। নাগরীক আন্দোলনের ফলে নগর অভ্যন্তরস্থ খালগুলির অবৈধ-দখল উচ্ছেদ, এবং খালগুলির স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে অনতে নাগরীক সমাজ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগর অভ্যন্তরস্থ ২২ খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ২০০৮ সালে।
তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নতুন উদ্যমে খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এ সময় ময়ূর নদীর অবৈধ দখলও উচ্ছেদ করা হয় এবং ময়ূর নদীর পাড়ে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে লিনিয়ার পার্ক নির্মানের কাজও শুরু হয়।
দখল-দূষণের কারণে খুলনার এক সময়কার খরস্রোতা ময়ূর নদী মরা খালে পরিণত হয়। খুলনার নাগরিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে নদীটিকে বাঁচাতে মহাপরিকল্পনা নেয় কেসিসি। বর্তমানে নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়ূর নদী খননের কাজ চলছে। এরপর নদীর দুই পাড় বাধাই করা হবে। নদীর পাড়ে তৈরি করা হচ্ছে লিনিয়ার পার্ক। লিনিয়ার পার্ক’র আওতায় নদীতে প্যাডেল কার ও স্পিড বোট চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে কেসিসির।
কিন্তু এ সকল পরিকল্পনা হঠাৎই অবাস্তব পরিকল্পনায় পর্যবসিত হয়ে পড়েছে, কারণ, ময়ূর নদীতে নৌযান চলাচলের পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়ে ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকায় গল্লামারী সেতু নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, আর তা করা হয়েছে কেসিসি’র সাথে কোন প্রকার আলাপ-আলোচনা না করেই। বর্তমানে নদীর পানি থেকে মাত্র ৩ ফুট উচ্চতায় নির্মাণ করা হয়েছে সেতুর গার্ডার, যা কোন ধরনের নৌ-যান চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য। বর্ষাকাল বা অন্যান্য সময়ে পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে গার্ডারের অর্থাৎ ব্রীজের নিচের ফাকা অংশটুকু সম্পূর্ণ পানিতে ভরাট হয়ে ব্রীজটি একটি বাধে পরিণত হবে, ফলে সৃষ্টি হবে পরিবেশ বিপর্যয় যা নদীটির মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে জানান পরিবেশবিদগণ।
সড়ক বিভাগের এমন তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশী সহ প্রকৌশলীগণ এবং খুলনার নাগরিক নেতৃবৃন্দ। তারা বলছেন, ময়ূর নদী খনন ও পাড় বাধাই করতে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই নদীকে খুলনার মিষ্টি পানির রিজার্ভার, নদীর তীরে লিনিয়ার পার্ক নির্মাণ করে প্যাডেল কার ও স্পিড বোট চালানোর জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় নৌপথ বন্ধ করে দিলে নদীটি মরা খালে পরিণত হবে এবং গৃহিত সকল উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল হয়ে যাবে, যা হবে খুলনার বিনোদোন ও পরিবেশ কেন্দ্রিক উন্নয়নের মাথায় আঘাত!
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ