খুলনা মহানগরীর সৌন্দর্য বর্ধন (বিউটিফিকেশন) প্রকল্প নিয়ে চলছে ভাওতাবাজী ও ছলচাতুরী। বছরের পর বছর কোন প্রকার সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ না করেই কোম্পানীগুলো বিজ্ঞাপনের বোর্ড ভাড়া দিয়ে কামিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা! আর বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে এসব দেখেও না দেখার ভান করে আছে কেসিসি’র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, অভিযোগ নগরবাসির।
নগরীর সড়কদ্বীপ সৌন্দর্যায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেসিসি’র চীফ প্লানিং অফিসার আবিরুল জব্বার জানান, খুলনা মহানগরীর সড়কদ্বীপ শিববাড়ি মোড় থেকে জোড়াগেট পর্যন্ত বিউটিফিকেশনের কাজ নিয়েছে গ্রামীণফোন কোম্পানী, ডাকবাংলো মোড় থেকে শিববাড়ি মোড় পর্যন্ত বিউটিফিকেশনের কাজ নিয়েছে বাংলালিংক ফোন কোম্পানী, কেডিএ এভিনিউ’র কাজ নিয়েছে বিজ্ঞাপনী সংস্থা ভিউফাইন্ডার এবং মজিদ স্মরণী’র কাজ নিয়েছে পোলাইট এ্যাডভার্টাইজিং কোম্পানী। ২০০৭ সালে তাদের এ সকল কাজের বরাদ্দ দেওয়া হয়।
উল্লিখিত কোম্পানীগুলিকে বিউটিফিকেশনের কাজ দেওয়ার সময় শর্ত ছিলো যে চুক্তিবদ্ধ সময়কালে নির্দিষ্ট সড়কদ্বীপগুলিকে সার্বক্ষণিক সৌন্দর্যমন্ডিত রাখবে হবে ও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সৌন্দর্যায়নের কাজ করতে হবে এবং এ সকল শর্ত পূরণ হলে কোম্পানীগুলো সড়কদ্বীপগুলো বিজ্ঞাপণের জন্য ব্যবহার বা বিজ্ঞাপণ ব্যবসার জন্য ব্যবহার করতে পারবে।
তবে প্রকৃত বাস্তবতা হ’ল কোম্পানীগুলো শুরুতে কিছু কাজ করে। এ সময় তারা সড়কদ্বীপগুলিতে কিছু গাছ লাগিয়ে তারকাটার বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয় এবং যেনতেন প্রকরে কিছু স্থাপত্য যেমন একটি কৃত্রিম ঝর্ণা, বেহারাসমৃদ্ধ একটি পালকি, হাস্যকর ধরনের কিছু কৃত্রিম পাহাড় ও কয়েকটি দাবা খেলার গুটি তৈরী করে সড়কদ্বীপগুলি সাজানোর চেষ্টা করা হয় যা সৌন্দর্যায়নের নামে এক ধরনের ভাওতাবাজি এবং এটাই তাদের শেষ কাজও।
কোম্পানীগুলো সড়কদ্বীপগুলিতে যে মটিফগুলি তৈরী করেছিলো তা এখন অনেক ক্ষেত্রে ভেঙেচুরে নোংরা আবর্জনায় পরিণত হয়েছে। এমনকি তারকাটার বেড়াগুলিও ভেঙেচুরে ঝুলে আছে যত্রতত্র। লাগানো গাছগুলির মধ্যে এখন আগাছাই বেশী। কোম্পানীগুলির তথাকথিত নগর সৌন্দর্যায়ন কর্ম এখন হাস্যকর দৃশ্যের অবতারণা করছে, এ যেন সৌন্দর্যের ব্যাঙ্গচিত্র! তবে তাতে তাদের ব্যবসার কোন ক্ষতি হচ্ছে না।
কোম্পানীগুলো আর কোন বিনিয়োগ না করেই ভাঙাচোরা সোন্দর্যের সড়কদ্বীপগুলিতে বিজ্ঞাপণী বোর্ড লাগিয়ে কামিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
কেসিসি সূত্রমতে, কোম্পানীগুলো উল্লিখিত এলাকায় তাদের স্থাপিত বিলবোর্ড’র রাজস্ব হিসেবে প্রতি বর্গফুট’র জন্য বাৎসরিক ৫০ টাকা কেসিসিকে প্রদান করে।
অন্যএকটি সূত্র জানায়, উল্লিখিত এলাকায় প্রতি বর্গফুট বিলবোর্ডের বাৎসরিক ভাড়া ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, যা কোম্পানীগুলো ভোগ করছে। আর কোম্পানীগুলোর বিলবোর্ড’র মোট পরিমাণ’র হিসাব প্রদর্শন এবং সে হিসাব অনুযায়ী রাজস্ব প্রদান নিয়েও আছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।
চুক্তির শর্ত মেনে সৌন্দর্যায়নে পুঃন বিনিয়োগ না করেই বছরের পর বছর কোম্পানীগুলো তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে অথচ কর্তৃপক্ষ তাদের কিছুই বলছেনা এটা কি করে সম্ভব জানতে চাইলে চীফ প্লানিং অফিসার বলেন, প্রামীণফোন কোম্পানীকে অনেক বার চিঠি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারা সিটি কর্পোরেশনের চিঠিকে কোন পাত্তাই দেয়নি এবং চুক্তি অনুযায়ী কাজও করে নি। তবে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ অবস্থায় তাদের বরাদ্দ কেন বাতিল করা হয় নি জানতে চাইলে কেসিসি’র একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার বলেন, বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেবে কেসিসি’র সাধারণ সভা। কোম্পানীগুলির বরাদ্দ বাতিলের জন্য বহুবার সুপারিশ করা হয়েছে কিন্তু সাধারণ সভার নির্দিষ্ট কিছু সদস্যের তদবিরের কারণে মেয়র তাদের বরাদ্দ বাতিল না করে একাধিকবার ক্ষমা করে দিয়েছেন। এ সকল তদবিরের জন্য কোম্পানীগুলো কি পরিমাণ টাকা খরচ করে বিষয়টি তার জানা আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি কোন জবাব দেন নি।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ