গুরু পাপে লঘুদন্ড প্রদানই ভেজাল প্রতিরোধে প্রধান অন্তরায়, অভিমত ভোক্তাদের

সর্বগ্রাসি বহুমূখী ভেজালের আগ্রাসনে বিশুদ্ধ খাবার এখন শুধু একটি ‘শব্দে’ পরিণত হয়েছে, যা পাওয়া যায় একমাত্র অভিধানে! তৈরী খাবার, ফলমূল এমন কি ওষুধ বিক্রেতারাও ভেজালের প্রতিযোগীতায় মেতেছে! ভেজাল ও বাসি-পঁচা খাবার বিক্রিতে তথাকথিত নামিদামি প্রতিষ্ঠান থেকে রাস্তার দোকানীরা কেউ পিছিয়ে নেই। ভেজাল বিরোধী ভ্রাম্যমান আদালতও খাদ্যে ভেজাল রোধে কার্যকর হচ্ছে না! সাধারণ ভোক্তাদের অভিযোগ, “গুরু পাপে ভেজাল খাদ্য উৎপাদকদের লঘু দন্ড প্রদানই ভেজাল প্রতিরোধের প্রধান অন্তরায়।”

বিশুদ্ধ খাদ্য আইনানুযায়ী খাদ্য তৈরী ও বিক্রয়ের প্রধান শর্ত হ’ল ভেজাল মুক্ত, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাদ্য তৈরী করা, বাসি-পঁচা খাদ্য সংরক্ষণ ও বিক্রয় না করা। কারণ এ সকল কারণে তাৎক্ষণিক মারাত্মক ডায়রিয়া থেকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্যান্সার সহ বিভিন্ন জটিল রোগ মানব দেহে জন্ম নেয় এবং মানুষের পরিপাকতন্ত্রের স্বাভাবিক কর্মপ্রক্রিয়া ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে মানুষ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের রোগে ভোগে।

জেলার খাদ্য তৈরীর পরিবেশ : খুলনা মহানগরী সহ রূপসা-বটিয়াঘাটা-ডুমুরিয়া উপজেলার দেড় শতাধিক বেকারী, হোটেল-রেস্তোরা ও মিষ্টির দোকান, ওষুধের দোকান ও ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর পরিদর্শন করে খাদ্য তৈরীর যে পরিবেশ দেখা গেছে তা ভয়াবহ। চরম নোংরা শ্যাতশেতে ঘর, মাছি-তেলাপোকা-ইদুর ও এদের বিষ্ঠার স্বাবাবিক উপস্থিতি, নোংরা পাত্র, ধুলোবালি আর পোশাক বিহীন উদোম শরীর কর্মীদের শরীরের ঘাম-ময়লায় জঘন্য পরিবেশে চলছে খাদ্য তৈরীর কাজ।

খাদ্যের ভেজাল : খাদ্যে যে সকল অপদ্রব্য ভেজাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে তার মধ্যে আছে কাপড় তৈরীর বিভিন্ন রং, ফরমালিন, ক্যালমিয়াস কার্বাইড, দুধের পরিবর্তে দুধের গন্ধযুক্ত কেমিক্যাল, ফলের পরিবর্তে ফলের গন্ধযুক্ত কেমিক্যাল ( যদিও পণ্যের গায়ে দুধ ও ফলের কথা লেখা থাকে) এবং খোলা বাজার থেকে ক্রয় করা খাদ্যে ব্যবহার নিষিদ্ধ নানাবিধ রং ও কেমিক্যাল সহ বিবিধ অপদ্রব্য ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ।

গত আগষ্ট মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত খুলনা মহানগরীর শতাধিক প্রতিষ্ঠান সহ উল্লিখিত তিনটি উপজেলার ১৬০টি’র অধিক প্রতিষ্ঠানে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ভেজাল বিরোধী অভিজান পরিচালনা করে। এর মধ্যে খুলনা মহানগরীর তথাকথিত নামিদামি প্রতিষ্ঠান সেফ এন্ড সেভ, বনফুল মিষ্টি, হোটেল রয়্যাল, কাচ্চিঘর, ইএফসি, রাঁধুনী হোটেল, স্কাই ভিউ হোটেল, ক্যান্টন চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট, ডিলাক্স হোটেল, সাতক্ষীরা ঘোষ ডেয়ারী, হাওড়া বেকারী, হুগলী বেকারী, বাংলাদেশ বেকারী সহ উল্লিখিত দেড় শতাধিক হোটেল-রেষ্টুরেন্ট কে বাসি-পঁচা, ভেজাল, মেয়াদ উত্তির্ণ খাদ্য তৈরী ও বিক্রয়ের অপরাধে ৫০০ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে অনেককেই একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে, তবুও নোংরা পরিবেশ, ভেজাল খাদ্য তৈরী এবং বিক্রয়ের চিত্র একটুও পাল্টায় নি।

খাদ্যে ভেজাল এবং তা প্রতিরোধে উল্লিখিত প্রচেষ্টার ফলাফল নিয়ে জেলার ১০০ জন ভোক্তার সাথে আলাপ করা হয়। অধিকাংশ ভোক্তার অভিযোগ, ভেজাল খাদ্য তৈরী ও অখাদ্য বিক্রেতাদের গুরু পাপে লঘু দন্ড প্রদান করা হচ্ছে, ফলে ভেজাল প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ভোক্তাদের দাবি, ভেজাল খাদ্য তৈরীকারী প্রতিষ্ঠানগুলি স্থায়ী ভাবে বন্ধ করে দিতে হবে এবং এ সকল প্রতিষ্ঠানের মালিকদের জরিমানার পরিবর্তে জেল’র শাস্তি প্রদান করতে হবে, আর তা হলেই ভেজাল খাদ্য থেকে জাতি মুক্ত হতে সক্ষম হবে।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ ,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *