বাংলাদেশের একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি রাষ্ট্রিয় কোষাগার থেকে সাংবাদিকদের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু বিষয়টির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিলেন যাদের ওপর, সাংবাদিকদের অভিযোগ, তারাই সংবাদপত্র মালিকদের সাথে মিলে টাকাগুলো লুটে নিয়েছে ও ভবিষ্যতের লুটের ব্যবস্থা করেছে! ফলে প্রতারিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আর রুটি-রুজির পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সারা দেশের সাংবাদিকগণ।
সাংবাদিকদের বেতন দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারী বিজ্ঞাপণের দাম বৃদ্ধি করেন এবং মালিকদের বলেন, এই বাড়তি টাকা থেকে সাংবাদিকদের বেতন দিতে হবে। ২০০৯ সালের মে মাস থেকে বর্ধিত বিজ্ঞাপণ মূল্য কার্যকর হয়। এর আগে প্রতি কলাম ইঞ্চি অর্থাৎ এক বর্গইঞ্চি সরকারী বিজ্ঞাপণের মূল্য ছিলো সূত্রমতে, ৬৯ টাকা যা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমান মূল্য হয়েছে ২৫২ টাকা। শর্ত হ’ল মিডিয়া তালিকাভুক্ত প্রতিটি লোকাল সংবাদ পত্রে ন্যুনতম ৮ জন স্টাফ রিপোর্টার থাকতে হবে যাদের সিনিয়র থেকে জুনিয়রদের বেতন হতে হবে ২০ হাজার টাকা থেকে ১৭ হাজার টাকা, যা নিয়মানুযায়ী বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে যদিও আসল লাভ হ’ল মালিকদের।
যে পত্রিকা বছরে ৩০ লাখ টাকার বিজ্ঞাপণ পেত সেই একই পরিমাণ বিজ্ঞাপণের বাড়তি দামের জন্য সে পাবে এক কোটি টাকারও বেশী অথচ ৮ জন স্টাফ রিপোর্টার কে নির্ধারিত বেতন দিতে তার খরচ হবে বছরে প্রায় ১৮ লাখ টাকা, অর্থাৎ সাংবাদিকদের বেতন পরিশোধ করার পরও মালিক বাড়তি পাচ্ছেন ৫২ লাখ টাকার বেশী।
এ ব্যাপারে খুলনার সাংবাদিকদের বক্তব্য, বিষয়গুলি ফয়সালা করার জন্য সাংবাদিকদের তথাকথিত নেতা রুহুল আমিন গাজী সহ একাধিক সাংবাদিকনেতা খুলনা শহরে এলেন সংবাদপত্র মালিক ও স্টাফ রিপোর্টারদের সাথে আলাপ করে বিষয়টি নিস্পন্ন করতে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা শুধু মালিকদের সাথে বৈঠক করে ঢাকায় ফিরে গেলেন। এর ফলে মালিকরা তাদের বাড়তি বিজ্ঞাপণ বিল পেতে শুরু করলেন ২০০৯ সালের মে মাস থেকে, কিন্তু স্টাফ রিপোর্টারদের বেতন সেই যা ছিলো তাই, কেউ এক হাজার টাকা, কেউ বড়জোর দুই হাজার টাকা মাত্র!
এ ভাবে চললো দুই বছর। এর পর বিষয়টি যে কোন ভাবে হোক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতে পারলেন এবং সাথে সাথে নির্দেশ দিলেন, যারা সাংবাদিকদের বেতন সরকার নির্ধারিত ভাবে বৃদ্ধি না করে বাড়তি বিজ্ঞাপণ বিল নিয়েছে তাদের বিজ্ঞাপণ বন্ধ এবং যে টাকা তারা নিয়েছেন তা ফেরত দিতে হবে।
এবার তো মহাগ্যাড়াকল, মালিক সাহেবরা আবার সেই সাংবাদিক নেতাদের হাত-পা ধরলেন, রক্ষে করো। সাংবাদিক নেতারা নতুন বয়ান নিয়ে আসলেন নগরে নগরে, এবারও তারা পত্রিকাগুলিতে কার্যরত প্রকৃত স্টাফ রিপোর্টারদের সাথে আলাপ করে তাদের চিহ্নিত করলেন না, তারা আবারও বসলেন মালিকদের সাথে কিন্তু বললেন, প্রত্যেক স্টাফ রিপোর্টারকে ‘ব্যাংক এ্যাকাউন্ট’ করে দিয়ে সেই এ্যাকাউন্টে তাদের বেতন দিতে হবে।
খুলনা মহানগরীর একাধীক প্রথম সারির পত্রিকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাংবাদিকগণ জানান, মহামান্য মালিকগণ ( সম্ভবত সাংবাদিক নেতাদের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে ) তাদের বাড়ির চাকর, গাড়ির ড্রাইভার, অফিসের পিওন, বিজ্ঞাপণ কর্মচারী আর একান্ত ‘অনুগত’ ২/১ জনকে তাঁর পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে রাজধানী থেকে আগত সাংবাদিক নেতাদের দেখিয়ে দিলেন ও তাদের নাম সরকারের খাতায় উঠিয়ে দিলেন এবং তাঁর নির্ধারিত স্টাফ রিপোর্টারদের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে সরকার নিধারিত বেতনও পাঠাতে লাগলেন, যদিও মালিক মহাশয় তাদের চেকগুলি আগেই সই করিয়ে নিজের কাছে নিয়ে নিয়েছেন! ফলে প্রকৃত সাংবাদিকরা ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত দুধ না পেয়ে ভ্যা ভ্যা ই করে যেতে লাগলেন কারণ, এই ২০১৫ সালেও তাদের বেতন হ’ল কারো ১৫শ’ টাকা আর কারো কারো সর্বোচ্চ চার হাজার টাকা!
এদিকে গত ৮ সেপ্টেম্বর সরকার নতুন বেতন স্কেল ঘোষণা করেছে যেখানে সর্বোচ্চ বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৮ হাজার টাকা (নির্ধারিত), এবং সর্বনিম্ন বেতন ৮হাজার ২৫০ টাকা (মূল বেতন)।
দীর্ঘকাল যাবৎ বাংলাদেশের সংবাদপত্র মালিকরা প্রায় বিনা বেতনে সংবাদকর্মী খাটিয়ে চলেছেন, আর তাদের প্রদেয় কার্ড ভাঙ্গিয়ে ভয় দেখিয়ে মানুষদের নিকট থেকে টাকা আয় করার জন্য প্রভাবিত করার মাধ্যমে সাংবাদিকদের দুর্নীতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন ( অভাবের কারণে বাধ্য হয়ে, আবার স্বভাবের কারণেও অনেকে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন)।
প্রদীপের নীচে অন্ধকার! সেই অন্ধকারের উপর আলো ফেলতে চেষ্টাই এ লেখার উদ্দেশ্য, কারণ হাজার হাজার মানুষের বিভৎষ জীবনযাপন সমাজচক্ষুর অন্তরালে নিয়ে গেছে এই অন্ধকার, যা অপরাধী করছে এই সমাজ-রাষ্ট্রকেও।
যারা জীবন বাজি রেখে সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, জঙ্গীদের বিরুদ্ধে লিখছেন, যারা ক্ষমতাধর দুর্নীতিবাজ আমলা, কালোবাজারী, ক্ষমতার অপব্যাবহারকারী মন্ত্রী বিবেকহীন হিংস্র রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে লিখছেন দেশের স্বার্থে সমাজের মানুষদের স্বার্থে, আর তার ফলে অঙ্গ হারাচ্ছেন, এমনকি জীবনও, অর্থাৎ অক্ষরিক অর্থেই জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য তাদের নিজেদের কথা লেখার বা বলার কোনো জায়গা নেই, বোধহয় নেই শোনার লোকও।
পেশাদার এই সাংবাদিকদের উপর যে শোষণ-নির্যাতন চলছে তার প্রতিকারে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো তারা মালিকদের টাকায় বশ হয়ে ফিরে গেছে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে।
সাংবাদিকরা নিজেদের কথা লিখলে কোন মালিক তা ছাপে না, এ যেন নিজভূমে পরবাসী জীবন। কিন্তু কেন এ অবস্থা ? সাংবাদিকরা কেন মালিক কর্তৃক নির্যাতিত হচ্ছেন, তাদের অপরাধ কি ?
মনে রাখতে হবে, এই আকালে যখন সত্যিকার অর্থে দেশ প্রেমিক মানুষ, সমাজ সেবক, মানুষ হিতৈশি মানুষ খুজে পাওয়া কঠিন, তখন প্রতিটি সাংবাদিকই সাংবাদিকতা শুরু করেছেন জীবন বাজি রেখে উল্লিখিত কাজগুলিই করার জন্য, এ কথা জেনেই যে, সাংবাদিকতা করে কোনো দিন প্রচুর টাকা কামানো যাবে না। তবে না খেয়ে মরতে হবে এ কথাও তারা ভাবেন নি।
সাংবাদিকরা দেশের মানুষের কাছে জানতে চায় কি তাদের অপরাধ, যে কারণে রাষ্ট্র ও মালিক কর্তৃক চরম আর্থিক শোষণ, নিপিড়ন সহ্য করে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে সমাজে চরম লাঞ্ছিত ও অবমানিত জীবন যাপন করতে হবে, আর দেশবাসির নিকট থেকে তাদের কর্মের এটাই কি উপযুক্ত প্রতিদান ?
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ