শোকের মাস, বেদনার মাস অগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে স্বাধীনতার শত্রু সেনাবাহিনীর বিপথগামী কতিপয় দুর্বৃত্ত স্বপরিবারে হত্যা করে। এ হত্যাকান্ড ছিলো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা ছিলো পাকিস্ত্মানের পক্ষে, যারা পাকিস্তানকে গোলা-বারুদ, অর্থ আর রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে সাহায্য করেছিলো তারা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে মেনে নিতে পারে নি, তাই স্বাধীনতার মাত্র সাড়েতিন বছরের মধ্যে তারা বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে হত্যা করে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো এ দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিতে তার অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে ধ্বংস করা, আর সে জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে সৈরাচারী সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশকে বেহিসাবি লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করে পরের মুখাপেক্ষি করে রাখা, আর সে জন্য প্রয়োজন ছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দর্শনকে পাকিস্তানী রাজনৈতিক দর্শনে পরিণত করা, যে কাজে তারা অনেকটাই সফল হয়েছিলো।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করেছিলো তাদের দায়িত্ব ছিলো বাংলাদেশে পাকিস্তানী ভাবধারা প্রবর্তন করা। আর এ উদ্দেশ্যকে মর্যাদা প্রদান ও বাস্তবায়ন করতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাদের সাথে মিলে যে সকল বাঙ্গালী সেনা অফিসার মিরজাফরের দল নিজ দেশের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলো ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিলো এবং পাকিস্তানী বাহিনীর পরাজয়ের পর তাদের সাথে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলো, তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং বাংলাদেশ পুলিশ, সেনাবাহিনী সহ বিভিন্ন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল করা হয়। এটা ছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের পাকিস্তানী যুগ! এ যুগ প্রলম্বিত হয় প্রায় দুই যুগ। এ সময় স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির মূলনীতি সহ সকল সেক্যুলার চিন্তাচেতনাকে কলুসিত করা হয় এবং বিভিন্ন কৌশলে স্বাধীনতা বিরোধিদের দর্শন প্রচার করা হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ সকল কিছুকেই হেয় করা হয়।
বিভিন্ন ভাবে স্বাধীনতা বিরোধীদের পুরস্কৃত করা হতে থাকে। এ পর্যায়ে নতুন একটি প্রজন্ম গড়ে তোলা হয় যাদের মনবৃত্তি জন্মথেকেই হয়ে ওঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানপন্থি দর্শনকেন্দ্রিক। যা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য অপুরণীয় ক্ষতির কারণ হয়েছে, যার ফল হ’ল সুদূরপ্রসারী যা আগামিদিনের বাংলাদেশের জন্য বয়ে অনবে আরও দেশদ্রোহমূলক কর্মকান্ড। আর এ সবই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কু-ফল। তাঁর হত্যার পিছনের কলকাঠি যারা নেড়ে ছিলো তারা বোধ হয় এটাই চেয়েছিলো যাতে স্বদেশেই দেশের শত্রু পয়দা হয়।
তবে জাতি আজ সে অবস্থা থেকে অনেকটাই বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে তার অর্থনীতিকে গুছিয়ে নিতেও সক্ষম হচ্ছে। ইতিহাসের সেই নৃসংসতম কালো দিন ১৫ আগষ্ট আজ বাংলাদেশের জাতিয় শোক দিবসে পরিণত হয়েছে, যে শোককে শক্তিতে পরিণত করেই ষড়যন্ত্রকারী এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা সম্ভব হবে আগামী দিনে।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ