মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে তরুণদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে

ইতিহাসবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মুনতাসির মামুন বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে তরুনদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। মুক্তিযুদ্ধকালে সারাদেশে অসংখ্য গণহত্যার ঘটনা রয়েছে। অনেকেই সে সম্পর্কে জানেন না। সে সকল ঘটনা বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। তিনি আজ বিকেলে খুলনা মহানগরীর খালিশপুর চরেরহাট বধ্যভূমি চিহ্নিতকরণ ও স্মৃতিফলক স্থাপনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরকর্তৃক সারাদেশের বধ্যভূমি, রাজাকার বাহিনীর অত্যাচারের স্থানসমূহ চিহ্নিতকরণের অংশ হিসেবে এই পরিচিতি ফলক স্থাপন করা হয়েছে।

এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খালিশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি সুলতান আহমেদ।
ড. মুনতাসির মামুন আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধকাীলন সময়ে সারাদেশে রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ বাহিনী রক্তের হোলিখেলায় মেতে ওঠে। তারা এদেশের নিরীহ নারী, পুরুষ, শিশু বৃদ্ধদের নির্বিচারে গুলি করে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করেছে। তারই অংশ হিসেবে চরেরহাট মাছ কোম্পানীর ঘাটে লঞ্চ থেকে নামিয়ে তিন শতাধিক নারী পুরুষ, শিশুকে হত্যা করে গণকবর দিয়েছে। সেই স্থানটি সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। সেই ইতিহাস জানাতে খুলনার কিছু নিবেদিত মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর সারাদেশে রাজাকার বাহিনীর অত্যাচারের স্থানসমূহ চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। খুলনা থেকেই এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কারণ, খুলনায় বড় বড় গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ শহরে জামায়াতের শীর্ষ নেতা ও রাজাকার বাহিনীর প্রধান রয়েছে। তাই খুলনার মানুষকেই তাদের অত্যাচারের কাহিনী মনে করিয়ে দিতে হবে, যাতে তারা সে সকল ঘৃণ্য রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করতে পারে। চরেরহাটের গণহত্যার ঘটনার উপর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে একটি প্রকাশনা প্রকাশ করার কথা বলেন। এই প্রকাশনার জন্য চরেরহাট বধ্যভূমিতে নিহতদের তথ্য সংগ্রহে সহায়তার জন্য অনুরোধ জানান।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বর্ক্তৃতা করেন ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের ট্রাস্টি সাধারণ সম্পাদক ডা: শেখ বাহারুল আলম, ১৩ নম্বর ওর্য়াড কাউন্সিলর খোরশেদ আলম টোনা, খালিশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: শহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আযাদ, ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টি সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী, হুমায়ুন কবীর ববি, শঙ্কর কুমার মল্লিক প্রমূখ। স্মৃতি ফলক উন্মোচন শেষে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

প্রসঙ্গত: ১৯৭১ সালের ৮মে চরেরহাটের মাছ কোম্পানীর জেটিতে নড়াইলের রঘুনাথপুর থেকে খুলনাগামী দুটো লঞ্চ থামায় পাকিস্তানী সেনারা। লঞ্চের সকল যাত্রীদের নামিয়ে স্কুলটির আশপাশ এলাকায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয়। এরপর একে একে হত্যা করা হয় সকলকে। পরে ওইসব হতভাগ্যদের লাশগুলো পাশের সড়ক ও আশেপাশের এলাকায় মাটিচাপা দেয়া হয়। তখন ভৈরব নদ আরও কাছে ছিল। এখন পূর্বপ্রান্ত ভেঙ্গে নদীটি অনেক দূরে সরে গেছে। এপারে চরের বিস্তৃতি ঘটেছে। সেদিনের ওই গণহত্যার শিকার হয়েছিল কমপক্ষে তিন শতাধিক মানুষ। গণহত্যার শিকারদের অধিকাংশের বাড়ি খুলনা শহরের বাইরে হওয়ায় তাদের নাম-ঠিকানা জানা যায়নি। যাদের নাম জানা গেছে তারা হচ্ছে মুসলিম লীগ নেতা এ্যাডভোকেট আয়ূব হোসেন, তাঁর শিশুপুত্র কামরুল হাসান, তাঁর বৃদ্ধ পিতা মোঃ হাতেম আহমেদ, মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বাবলা এবং তার দুই ছেলে ইবনে আহমেদ ও মোঃ ফারুখ হোসেন। নড়াইল থানার সেই সময়ের ভারপ্রাপ্ত অফিসার (ওসি), রূপসার আবু বকর সিদ্দিক ও শামসুর রহমান শামসু।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *