খুলনাঞ্চলের সবচেয়ে বৃহত ‘গল্লামারী বধ্যভূমি’ চিহ্নিত করে স্মৃতি ফলক স্থাপন

মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর পরিচালিত খুলনা অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি গল্লামারী বধ্যভূমি। আজ বিকেলে সেই বধ্যভূমি এলাকায় শহীদদের স্মরণে স্মৃতিফলক স্থাপন করেন ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’র ট্রাস্টি সভাপতি ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন।

প্রফেসর মামুন বলেন, ১৯৭১: গণহত্যা- নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বর্তমান প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং রাজাকার-আলবদর-আল শামস বাহিনীর গণহত্য-নির্যাতন স্মৃতি চিহ্ন হিসাবে রয়েছে তা জানানোর লক্ষ্যে। সেই ধারাবাহিকতায় আজ খুলনা অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি ‘গল্লামারী বধ্যভূমি’ চিহ্নিত করে স্মৃতি ফলক উন্মোচন করা হ’ল। আর্কাইভের পক্ষ থেকে সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা নির্যাতন কেন্দ্র, গণকবর ও বধ্যভূমি চিহ্নিত করে সেসব জায়গায় স্মৃতি ফলক স্থাপন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, যে রাজনৈতিক দলটির নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো সেই দলের সরকারের আমলেই আজও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হ’ল আমলাতন্ত্র! তিনি বলেন, ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানতন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বাড়ি বরাদ্দ দিয়েছেন খুলনায়, কিন্তু প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে ভালো বাড়ি থাকা সত্বেও পাওয়া গেছে একটি জ্বরাজীর্ণ বাড়ি, যা জাদুঘর নির্মাণের উপযোগী নয়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন এখানে আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে জাদুঘর নির্মাণ করতে, তিনি সহযোগীতা করবেন।

ড. মামুন আরও বলেন, বর্তমান প্রশাসনের বহু অফিসার গণহত্যা ক্ষেত্র চিহ্নিত করে যে স্মৃতি ফলক স্থাপন করা হচ্ছে তা বাধাগ্রস্ত করতে অসহযোগিতা করে চলেছে প্রতিনিয়ত।

১৯৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে খুলনা অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি গল্লামারী বধ্যভূমি। ততকালীন পূর্ব পাকিস্তান রেডিও স্টেশন (গল্লামারী রেডিও সেন্টার) ভবনে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষদের ধরে এনে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করে গল্লামারী নদীতে ফেলে দেয়া হতো।

প্রথম বিজয় দিবসের পর এই গল্লামারী বধ্যভূমিতে হাজার হাজার মানুষের কঙ্কাল পাওয়া যায়। নাম না জানা হাজার হাজার শহীদদের স্মৃতি বহন করে দাঁড়িয়ে আছে গল্লামারীর এই বেতার কেন্দ্রের বধ্যভূমি। এই বধ্যভূমিকে ঘিরে গড়ে উঠে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। গণহত্যা ও নির্যাতন কেন্দ্র বেতার ভবন হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান প্রশাসনিক ভবন।

৬ জানুয়ারি, ২০১৬ বুধবার বিকাল ৪ টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের পাশে ইতিহাসের এই কলঙ্কজনক স্থানটি চিহ্নিত করে স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুন।  এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ‘১৯৭১ঃ গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’র ট্রাস্টি সম্পাদক ডা. শেখ বাহারুল আলম, ট্রস্টি কোষাধ্যক্ষ শংকর কুমার মল্লিক, ট্রাস্টি হুমায়ুন কবির ববি, ট্রাস্টি চৌধুরী শহীদ কাদের, অধ্যাপক ড. চৌধুরী শহিদুল ইসলাম প্রমূখ।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *