আগামীকাল ২৫ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। তবে দিনটিতে সরকারি ছুটি থাকায় এবার বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচি পালিত হবে আগামী ২৯ নভেম্বর তারিখে।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ৯ টায় ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, সকাল ১০-৪৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একাডেমিক ফেয়ার উদ্বোধন, সকাল ১১ টায় আলোচনা অনুষ্ঠান। এছাড়াও এদিন বেলা ১২-৫৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য নবনির্মিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল এর উদ্বোধন, বেলা ১-১০ মিনিটে রাইঙ্গামারী গ্রামকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হবে (সাচিবুনিয়া সরস্বতী মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণে), বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৬ টায় শহীদ মিনার চত্ত্বর, অদম্য বাংলা ও কটকা স্মৃতিসৌধে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন। ক্যাম্পাসে আলোকসজ্জা, হলসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন এর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এবার একাডেমিক ফেয়ারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডিসিপ্লিন স্ব স্ব ক্ষেত্রে তাদের অর্জন ও সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে প্রদর্শন করবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে আয়োজিত একাডেমিক ফেয়ার খুলনাঞ্চলের স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এতদাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সবার জন্য তা দেখার সুযোগ থাকবে। এছাড়াও বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের স্টেক হোল্ডারদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এবার বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রাক্কালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নব নির্মিত নতুন ছাত্রী হলসহ বিদ্যমান, নির্মীয়মান ও নির্মিতব্য ভবনসমূহের নতুন নামকরণ করা হয়েছে। এই নামকরণের ক্ষেত্রে যে সমস্ত বাঙ্গালী কৃতি সন্তান বাংলা ভাষা,সাহিত্য-সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, গবেষণা, চিকিৎসা, ক্রীড়ায় বিশেষ অবদান রেখেছেন এবং বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ভূমিকা ও আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ এর অভ্যুদয় ঘটেছে সেইসব ব্যক্তিদের অবিস্মরণীয় অবদান অনাগতকালধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অবিস্মৃত রাখতে এই স্মারক নামকরণ করা হয়েছে। এই নামকরণের ফলে একাত্তরের বধ্যভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ প্রবেশ করলে মনে হবে এটা একখ- বাংলাদেশ যা আমাদের আবহমান সব ঐতিহ্যই ধারণ করে আছে।
ফিরে দেখা: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের নিরলস প্রচেষ্টা ও দীর্ঘদিনের আন্দোলন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারী গেজেটে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারি সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করা হয়। ১৯৯০ সালের জুন মাসে জাতীয় সংসদে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হয়, যা গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ওই বছর ৩১ জুলাই। ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে ৪ টি ডিসিপ্লি¬নে ৮০জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। ১৯৯১ সালের ৩০ আগস্ট প্রথম ওরিয়েন্টেশন এবং ৩১ আগস্ট ক্লাশ শুরুর মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের শুভ সূচনা হয়। পরে একই বছরের ২৫ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ২০০২ সালের ২৫ নভেম্বর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে পালিত হয় প্রথম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। এরই ধারাবাহিকতায় সেই থেকে প্রতিবছর ২৫ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সেশনজট, সন্ত্রাস ও রাজনীতিমুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রমের আজ ২৬ বছর পূর্ণ করলো।
মহানগরী খুলনা থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক সংলগ্ন ময়ূর নদীর পাশে এক মনোরম পরিবেশে গল্ল¬ামারীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। তবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকাটি ছিলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার এক বধ্যভূমি। প্রতিষ্ঠাকালের দিক থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নবম। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এবং ভবিষ্যতের চাহিদার নিরিখে এখানে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা বিষয়ের প্রতি অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বুয়েটের পরই ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স ক্রেডিট পদ্ধতি চালু হয়।
বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি স্কুল (অনুষদ) ও চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধীনে মোট ২৮টি ডিসিপ্লিনে (বিভাগ) শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত ব্যাচেলর ডিগ্রি, ব্যাচেলর অব অনার্স ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রি, এম ফিল, এবং পিএইচ ডি. প্রদান করা হয়।
স্কুলগুলোর মধ্যে কলা ও মানবিক স্কুলের আওতায় রয়েছে ইংরেজী ডিসিপ্লিন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ডিসিপ্লি¬ন এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিন।
জীব বিজ্ঞান স্কুলের আওতায় রয়েছে এগ্রোটেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, ফরেষ্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি, ফিশারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি, ফার্মেসী ও সয়েল সায়েন্স ডিসিপ্লি¬ন।
আইন স্কুলের আওতায় রয়েছে আইন ও বিচার ডিসিপ্লিন।
ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের আওতায় রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন ও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিন।
বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের আওতায় রয়েছে আর্কিটেকচার, আরবান এন্ড রুরাল প্লানিং, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, পদার্থ, রসায়ন বিজ্ঞান এবং পরিসংখ্যান বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন। ।
সমাজ বিজ্ঞান স্কুলের আওতায় আছে অর্থনীতি, সমাজ বিজ্ঞান, ডিভেলপমেন্ট স্টাডিজ ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লি¬ন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের আওতায় তিনটি ডিসিপ্লিন চালু হয়েছে, এগুলো হলো ড্রইং এ- পেইন্টিং, প্রিন্টমেকিং ও ভাষ্কর্য ডিসিপ্লিন।
এছাড়া ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন এন্ড রিসার্চ (আইইআর), সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড স্টাডিজ অন দি সুন্দরবনস (সিআইএসএস), রিসার্স সেল, মডার্ণ ল্যাংগুয়েজ সেন্টার ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডিজ শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ