কোটি কোটি মশার দখলে খুলনা মহানগরী এখন মশার পিঠে উড়ছে

খুলনা মহানগরী এখন মশার পিঠে উড়ছে! সন্ধ্যা হলেই ঝাক ঝাক মশা দখল করে নিচ্ছে সব বাড়ি-ঘর। মশার পোঁ পোঁ সঙ্গিত আর রক্তাক্ত কামড়ে এস এস সি পরক্ষিার্থী সহ শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা শিকেয় উঠেছে। মশার কামড়ে নগরবাসির অবস্থা এখন ত্রাহী মধুসুদন। এ সুযোগে হুহু করে বেড়েছে মশার কয়েল বিক্রি। নগরবাসির অভিযোগ, মশার কয়েলেও ঠেকানো যাচ্ছে না এত বিপুল মশা, শুধু পরিবেশই বিষাক্ত হচ্ছে আরও। নগরবাসি এই ভয়ঙ্কর মশার হাত থেকে বাঁচতে চায়।

মহানগরীর নিরালা আবাসিক এলাকার সাবিহা অক্তার, সুলতান রহমান, সোনাডাঙ্গার মাহাবুব বাবলু, সেলিম আনন্দ সহ নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলেই বাড়িঘর-সংসার সব মশার দখলে চলে যায়। মশার দ্বারা সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হচ্ছে পরিবারের শিশু এবং বৃদ্ধরা। এর ফলে একদিকে সন্তানদের পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে, অন্যদিকে মশার কামড়ে বিভিন্ন মারাত্মক সব রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে নগরবাসি।

খুলনা মহানগরীর মশা নিধনের দায়িত্ব খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কঞ্জারভেন্সি বিভাগের। কঞ্জারভেন্সি বিভাগ মশা নিধনে দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করে। একটি পদ্ধিতির মাধ্যমে তারা শুধু মশার ডিম মারে এবং অন্য পদ্ধতিতে তারা পূর্ণবয়স্ক মশা মেরে থাকে। তবে রহস্যজনক কারণে তারা সাধারণত লিম্বান ইসি-২০ (লার্ভিসাইট) নামের এক ধরনের পেষ্ট্রিসাইট ব্যবহার করে মশার লার্ভা বা ডিম মারে কিন্তু পূর্ণবয়স্ক মশাগুলিকে জিয়িয়ে রাখা হয় সম্ভবত প্রতিনিয়ত ডিম পাড়ার জন্য। স্বাভাবিক ভাবেই শীতের শেষে তাপমাত্রা একটু বাড়তেই প্রতি ঘন্টায় নগরীতে কোটি কোটি মশা জন্মাচ্ছে, যেদিকে এখনও নজর দেওয়ার সময় পাননি কেসিসি তথা কঞ্জারভেন্সি বিভাগের আধিকারিকগণ।

কঞ্জারভেন্সি বিভাগ সূত্রমতে, নগরীর ৩১ ওয়ার্ডে প্রতিদিনই একটি করে স্প্রে মেশিনের সাহায্যে মশার ডিম মারা হয়। প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দ ৩০০ এমএল লিম্বান ইসি-২০ যা প্রতি ১০ লিটার পানির সাথে ৫০ এমএল মিশিয়ে স্প্রে করা হয়। তবে পূর্ণবয়স্ক মশা নিধন বর্তমানে সম্পূর্ণ বন্ধ আছে, যদিও পূর্ণবয়স্ক মশা নিধনে ব্যবহৃত এ্যাডাল্ট্রিসাইট ‘লিমিট লিকুইট ইনসেক্টিসাইট’ এবং পর্যাপ্ত ফগার মেশিন মজুত আছে।

পূর্ণবয়স্ক মশা নিধন বন্ধ রেখে মশার প্রজনন কেন বৃদ্ধি করা হচ্ছে এবং সময় মত নগরীর মশা নিধন কার্য কেন শুরু করা হয় নি এমন প্রশ্নের উত্তরে কেসিসি’র প্রধান কঞ্জারভেন্সি অফিসার মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, খুব শিঘ্রই প্রতিটি ওয়ার্ডে ফগার মেশিনের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক মশা নিধন কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি আরও জানান, নতুন করে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে এ্যাডাল্ট্রিসাইট কিনতে যে সময় লাগবে সেই সময় পর্যন্ত ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত এ্যাডাল্ট্রিসাইট মজুত নেই বিধায় পূর্ণবয়স্ক মশা নিধন বন্ধ রাখা হয়েছে। কি পরিমাণ এ্যাডাল্ট্রিসাইট মজুত আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে ১০ হাজার লিটার লিমিট লিকুইট ইনসেক্টিসাইট মজুদ আছে এবং প্রতিটি ফগারমেশিনে দিনে পাঁচ লিটার হিসেবে প্রদিন প্রয়োজন ১৫৫লিটার। সে হিসেবে দুই মাসের অধিক মজুদ হাতে থাকতেও কেন পূর্ণবয়স্ক মশা নিধন বন্ধ রাখা হয়েছে তা বোধগম্য নয়।

মশার কামড়ে কিকি ধরনের রোগ হতে পারে জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ড. সর্বজিৎ বলেন, ম্যালেরিয়া ছাড়াও মারাত্মক সব রোগ যেমন ফাইলেরিয়া, আমাশয় এবং মারাত্মক গোদ রোগ বা এলিফ্যান্টাইসিস হতে পারে মশার কামড়ে। এ জন্য মশা থেকে সাবদান হতে তিনি সকলকে পরামর্শ দেন।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *