খুলনায় প্রথম মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী বীরদের স্মরনে বিভিন্ন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত

১৯৭১ সাল। ২৫ মার্চ কাল রাত। এরপর সারা দেশে ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়ছে পাক সেনারা। নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর চালাচ্ছে নির্মম নির্যাতন, ঘরবাড়ী আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে, যুবকদের লাইনে দাড়িয়ে গুলি করে হত্যা করছে আর যুবতিদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে ক্যাম্পে আর চালাচ্ছে পৌশাচিক নির্যাতন। খুলনা ও এর বাইরে নয়, তৎকালীন মুসলিমলীগ এর বড় বড় পান্ডদের হাতের মুঠোয় ছিলো খুলনাঞ্চল।

 মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভেই খুলনার মুক্তিকামী মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তোলে পাকসেনাদের গতি পথে। তারিখটি ছিলো ৪ এপ্রিল, মধ্যরাতে বর্তমান গল্লামারিস্থ রেডিও সেন্টার পাক দখল মুক্ত করার জন্য সুবেদার জয়নুল আবেদীন এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ঝাঁপিয়ে পড়ে। নিরালা সিটি কলেজের হোষ্টেল থেকে গল্লামারী পর্যন্ত তৈরী হয় এক মহা রনক্ষেত্র, ভোর পর্যন্ত চলে এই যুদ্ধ। শুধু মুক্তিবাহীনি নয় স্থানীয় মুক্তিকামী জনসাধারন ও অংশ নিয়েছিলো এই যুদ্ধে। যুদ্ধে শহীদ হন কমান্ডার সুবেদার জয়নাল আবেদীন সহ আরো দুই জন। সিটি কলেজ হোস্টেলের মাঠেই সমাহিত করা হয় কমান্ডারকে।

সেই যুদ্ধে প্রতক্ষ্য ও পরোক্ষ ভাবে অংশগ্রহণকারী বীরদের স্মরনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সংগঠন “লোকচেতনা”র আয়োজনে আজ সিটি কলেজ হোষ্টেল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচী। কর্মসূচীর মধ্যে ছিলো শহীদের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া মহফিল, আজকের আমরা ও মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক কুইজ প্রতিযোগীতা। আয়োজক সংস্থার সমন্বয়ক শেখ ইলিয়াস বলেন, “ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আমাদের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সাধারন জনগসেনর মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই আজকের এই আয়োজন।

লোকচেতানর সমন্বয়ক শেখ ইলিয়াস’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন, সংসদ সদস্য  মিজানুর রহমান মিজান, খুলনা জেলা পরিষদ প্রশাসক মোঃ হারুনুর রশিদ, ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ আনিসুর রহমান বিশ্বাস, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েকুজ্জামান, খুলনা সিটি কলেজের অধক্ষ্য মোঃ ইমান আলী, বীর মুক্তিযুদ্ধা শেখ ইউনুস আলী ও শহীদ সুবেদার জয়নুল আবেদীনের দুই পুত্র শেখ বদরুদ্দোজা মানিক এবং শেখ মোঃ শামসুদ্দোহা। অতিথিরা তাদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বর্তমান প্রজন্মের কাছে আমাদের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার আহবান জানান শিশুদের পিতা-মাতা ও শিক্ষকদের কাছে।

কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারী বানিয়াখামার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ, সোনাপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নিরালা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং এসওএস হারমান মাইনার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পুরস্কার স্বরুপ বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনি  বিতরন করেন উপস্থিত অতিথিবৃন্দ।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ আলমগীর কবির, মুন্সি হেকমত আলী, আ ফ ম মহসিন, হাসমত আলী, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, বৃহত্তর আমরা খুলনাবাসী’র ডাঃ নাসির উদ্দিন, মোঃ মাহবুবুর রহমান খোকন, কৃষক লীগের শ্যামল সিংহ রায়, ওয়ার্কার্স পার্টির মফিদুল ইসলাম, আওয়ামী মহিলালীগ এর মিসেস পারভীন হাসমত, ওলামালীগের ক্বারী শরিফ মিজানুর রহমান, সমাজ সেবক অধ্যাপক আলী আকরব, জিএম মহিউদ্দিন, মোঃ সিরাজুল ইসলাম, মোঃ হেমায়াতুল ইসলাম সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক ব্যাক্তিসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *