নকল চেরী ফলে সয়লাব খুলনার ফল বাজার সহ বিভিন্ন মার্কেট। নকল ও বিষাক্ত ভেজাল পণ্য এ ফলের ব্যবহার এখন সর্বত্র বিস্তৃত। এ ফল দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন খাদ্যে গ্রহণ করায় সাধারণ মানুষ এখন বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুকিতে এ বক্তব্য বিশেসজ্ঞদের, তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ নিরব। নকল ও ভেজাল হলেও এটিই বাজারের সবচেয়ে দামী ফল, এক কেজির দাম ৫০০ টাকা!
খুলনা মহানগরী সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চেরী ফলের নামে লাল রং’র এক ধরনের ভেজাল নকল ফল বিক্রি হচ্ছে। এক সময় সাধারণ মানুষ ছিলো এর ক্রেতা, কিন্তু বর্তমানে এ নকল ফলের বাজার ব্যাপক ভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছে। বড় বড় প্রথম শ্রেণীর বেকারীগুলো তাদের বিভিন্ন খাবারে এ নকল ও ভেজাল ফল ব্যবহার করছে। একই ভাবে বিভিন্ন মিষ্টির দোকান তাদের বিভিন্ন মিষ্টিতে এবং নগরীর সবচেয়ে দামী হোটেল ক্যাসের সালাম, ওয়েষ্টার্ন ইন সহ উচুমানের হোটেলগুলি তাদের বেকারী পণ্য সহ বিভিন্ন পদের চায়নিজ রান্নায় এই নকল চেরী ফল ব্যবহার করছে!
নকল চেরী কি ? চেরী ফল নামে বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে তা আসলে জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরী ভেজাল নকল চেরী। নকল চেরী হ’ল সকলের অতি পরিচিত ‘করমোচা’ ফলকে ‘কাপড়’ রাঙানো রঙে দীর্ঘক্ষণ জ্বালিয়ে গাঢ় লাল কার হয়। পরে কাপড় রাঙানো রঙে জ্বালানো এই লাল করমোচাকে চিনির সিরায় ভিজিয়ে মিষ্টি বানানো হয়।
এই নকল চেরী মানুষের খাদ্য হিসেবে বিপদজনক কারণ এতে যে রং ব্যবহার করা হয় তা কাপড়ে ব্যবহারের জন্য, যা মানুষের পেটে গেলে ক্যান্সার সহ বিভিন্ন জটিল রোগ হয়, অন্যদিকে মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে অতি শস্তা একটি ফলকে নকল ও ভেজালের মাধ্য ধোঁকা দিয়ে সবচেয়ে বেশী দামের ফল হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, এই নকল চেরী উৎপাদন করা হয় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অঞ্চলে এবং চোরাই পথে বাংলাদেশে ঢোকে ফলে এর কোন আমদানি প্রমাণাদি পাওয়া যায় না, কিন্তু আসল চেরী ফল হলে অবশ্যই আমদানী পণ্যের ছাড়পত্র থাকতে হবে, কারণ চেরী শীত প্রধান অঞ্চলের বিদেশী ফল, আমদানী করা ছাড়া বাংলাদেশে পাওয়া যাওয়ার কথা নয়।
এ বিষয়ে নগরীর বিভিন্ন ফল বিক্রেতাদের নিকট জানতে চাইলে তারা জানান, এক কেজি চেরী ফল তারা বিক্রি করেন ৫শ’ টাকা (৪০ গ্রাম ওজনের এক প্যাকেট ২০ টাকা)। কোন কোন সময় তারা এ ফল আড়ৎ থেকেও ক্রয় করেন, আবার বিক্রেতারা তাদের দোকানে এসেও সাপ্লাই দিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে খুলনা বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ একবার নকল চেরী’র বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন এবং কয়েকজন বিক্রেতাকে জরিমানা করার মাধ্যমে বিষয়টির সমাপ্তি ঘটে!
কিন্তু নকল চেরী’র ব্যবসা যেমন ভাবে চলছিলো আজও তেমন ভাবে চলছে তবে এ ব্যবসা আরও বিস্তার লাভ করেছে এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ এখন নকর চেরীর ভোক্তা। অথচ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এ বলা হয়েছে যে, কোন পণ্যের নকল প্রস্তুত বা উৎপাদন বিপণন করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর সশ্রম বা বিনা শ্রম কারাদন্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে, বাস্তবে যদিও তেমন ঘটনা এখও ঘটেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটি (ক্যাব) খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম ডেভিড বলেন, সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে নকল ও ভোজাল পণ্য বিক্রি করা জঘন্য অপরাধ। এই নকল ও ভেজাল চেরী বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ