ধানের জন্ম ইতিহাসঃ পর্ব-২

বাংলাদেশে ধান’র জাত ও তার ক্রমবিকাশঃ

চাষিভাই-বোনদের হাতেই বুনোধান জাত থেকে আউশ, আমন, বোরো ও অন্যান্য জাতের ধানের ক্রমবিকাশ ঘটেছিল। আদি রায়েদা জাত খুলনায় সৃষ্টি হয়। এ রায়েদা জাতের ধান জলী আমন বা বুনা আমন নামে বিখ্যাত।

বাংলাদেশে অন্যান্য বন্যা প্লাবিত স্থানে যে সব জলী আমন জাতের ধান পাওয়া যায়, তা থেকে রায়েদা ধানের বিশেষ পার্থক্য আছে, যেমন- রায়েদার বীজে কোনো সুপ্তিকাল নেই, যা কি-না ধান কাটার পর বীজ লাগালেই চারা গজিয়ে যায়।

রায়েদা থেকে অন্যান্য জলী আমন যথা- বাইশ-বিশ, গাবুরা, বাজাইল, দীঘা প্রভৃতি জাতের ধান গৃহস্থ বাছাই করে জাত তৈরী করে নেয়। রায়েদার ভেতরেও নানা জাত আজও আছে।রায়েদা থেকে কালক্রমে বাছাই করা হয় বুনো আমনের অন্যান্য বিখ্যাত জাতসমূহ।

এ সব বোনা আমন জাত গুলোর মধ্যে যে সব জাত বেশী বন্যা সহ্য করতে পারত না তা থেকেই কালক্রমে রোপা আমন বা ট্রান্সপ্লান্ট বা টি আমন জাত সমূহের সৃষ্টি হয়। যেমন-কালো আমন, বাজাইল, লক্ষ্ণী দীঘা ধান (৭-৮হাত গভীর পানিতে হতে পারে), তা থেকে জোয়াল ভাঙ্গা, বাদল, কার্তিকা বা কাটিয়া বাগদার এবং পরবর্তী কালে তিলক কাচারী ধানের উৎপত্তি হয়। এ তিলক কাচারি ধান জলী আমন ও রোপা আমন উভয়ের মধ্যে আছে।এর বন্যা প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে তবে কালা আমন, দুধলাকী বা ধলা আমনের সমকক্ষ নয়।

এ সব তিলক কাচারি জাতের ধান থেকে আশ্বীনা ও ভদোইয়া এবং পরবর্তীকালে শাইল ধানের জাত, যেমন ইন্দ্রশাইল, দুধসর, ঝিঙাশাইল, দাদখানি বা কাটারিভোগ এ সবের উদ্ভব হয়।এদের ভেতর ঝিঙাশাইল জাতের ধান লম্বা এবং কালিজিরা, চিনিগুড়া, বাদশাহভোগ, কাশকাখি ও রাঁধুনিপাগল  ক্ষুদ্রাকৃতি পোলাও চাল। সুগন্ধি ও সবচেয়ে ছোট চালবিশিষ্ট ধানের জাতটি হ’ল রাঁধুনিপাগল।

ভাদোইয়া বা আশ্বীনা থেকে বাছাই করে সৃষ্টি করা হয় আউশ জাতের ধানসমূহ। এ সব আউশ জাতের ধানের জীবনকাল ৯০-১১০ দিন এবং শাইল বা রোপা আমন জাতের আগুল জাতের ধানের জীবনকাল প্রায় ১২০-১২৫।তবে রায়েদা, জলী আমন ও শাইলধানের জাতসমূহের জীবনকাল বিশেষ করে ফুল ফোটার সময় হয় দিনের দৈর্ঘ্য যখন ১২ ঘন্টার নীচে নেমে যায়। সে জন্য সব আমন ও শাইল ধান কে বলা হয় আলোক সংবেদনশীল। অন্যদিকে আউশের জাতসমূহ আলোক সংবেদনহীন।

রায়েদার যে সব জাত রবি মৌসুমে হতো, তা থেকে কিছু কিছু জাত বৈশাখ মাসেই ফুল দিতে শুরু করল।কালক্রমে তা থেকেই বোরো জাতের ধান সৃষ্টি করা হয়। বোরো শব্দ সিলেটের বাঁওড় শব্দ থেকে উৎপত্তি লাভ করে।বোরো ধান আউশের মতো বা আলোক সংবেদনহীন।

এভাবেই তৈরী হয় আউশ, আমন ও বোরো ধানের জাতসমূহ।এ দেশের হাজার হাজার ধান চাষি তাদের নিজস্ব চাহিদা মাফিক হাজার হাজার জাতের ধান তৈরী করে ফেলে।১৯৩০ সালের দিকে এক জরিপে জানা যায় যে সে সময় অবিভক্ত বাংলায় প্রায় ১৫ হাজার ধানের জাত ছিল।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *