নগরীর খেলাধুলার ব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ায় কিশোর ও যুব সমাজ খেলছে মাদকের মাঠে

নিরালা আবাসিক এলাকা পার্কে গর্ত সেচে মাছ ধরছে শিশুরা

নিরালা আবাসিক এলাকা পার্কে গর্ত সেচে মাছ ধরছে শিশুরা

পরিকল্পিত ভাবে খুলনা মহানগরীর পার্ক ও খেলার মাঠগুলিকে হত্যা করা হয়েছে। এর ফলে নগরীর কিশোর ও যুব সমাজ খেলাধুলা ও বিনোদনের সকল সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে মাদকের আশ্রয়ে ঝুকে পড়েছে বলে মনে করছেন নগরবাসি।

গত শতকের ৯০’র দশক পর্যন্তও নগরীর প্রতিটি পাড়ায় ছিলো একাধিক খেলার মাঠ, এবং তার সাথে তাল মিলিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ক্লাব। এ সকল ক্লাবের মধ্যে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় নগরীতে গড়েওঠে খেলাধুলার বিশেষ সংস্কৃতি। এর ফলে খুলনা মহানগরীতে অনুষ্ঠিত হ’ত দেশের সবচেয়ে আকর্ষনীয় ফুটবল লীগ, যেখান থেকে নিয়মিত ভাবে সাপ্লাই হ’ত জাতীয় দলের ফুটবল প্লেয়ার। একটা সময় ছিলো যখন জাতীয় ফুটবল দল প্রায় খুলনা নির্ভরও হয়ে পড়ে।

এর পাশাপাশি ছিলো জমজমাট ক্রিকেট লীগ। খুলনা সার্কিট হাউস ময়দান সারা বছর থাকতো ভাবি ক্রিকেটার এবং ফুটবল প্লেয়ারদের মহড়া ও পদচারণায় মুখর। এরপর শুরু হ’ল আকাল! কি করে যেন নগরীর পাড়াগুলি থেকে খেলার মাঠগুলি, সাথে পুকুরগুলিও উধাও হয়ে গেল! সার্কিট হাউস ময়দানও এখন আর খেলার জায়গা নয়, বছরের বড় একটা সময় এ ময়দান ভাড়া দেওয়া হয় ব্যবসায়ীদের নিকট! তারা ছাড়লে পড়ে থাকে ইট-কাঠের স্তুপ মাসের পর মাস। ফলে ওটি আর খেলার উপযোগী মাঠ নেই।

নগরীতে একাধিক নগর মোড়ল (কেডিএ,কেসিসি) থাকলেও কেউ এ বিষয়ে তেমন কোন পদক্ষেপ নেয় নি। সূত্রমতে, কেসিসি কর্তৃপক্ষ নগরীর ৩১টি ওয়ার্ড’র জন্য তৈরী করেছিলো মাত্র পাঁচটি পার্ক (শহীদ হাদিস পার্ক, জাতিসংঘ পার্ক, গোলকমনি পার্ক, সোনাডাঙ্গা আ/এ পার্ক ও নিরালা আ/এ পার্ক ), সময়ের বিবর্তনে যা এখন বৃক্ষমেলা, শিল্পমেলা সহ বিভিন্ন মেলার স্থান ও মাছের অভয়াশ্রমে পরিণত।

ফলে আগে যেখানে হাজার হাজার কিশোর ও যুবক প্রতিদিন ব্যাস্ত থাকতো ফুটবল, ক্রিকেট সহ বিভিন্ন খেলাধুলা নিয়ে তারা আজ কাজ হারিয়ে উদভ্রান্তের মত পাড়ায় পাড়ায় অড্ডাবাজি আর মাদকের কাছে নিজেদের সপে দিয়েছে। প্রথমে নেই কাজ তো খৈ ভাজ দিয়ে শুরু, তার পর মরণ নেশায় বুদ হয়ে ভুলেই গেছে নিজেদের পরিচয়। আর অনেকে করার কিছু না পেয়ে ভাড়া খাটতে অথবা নিজেদের পরিচয় উদ্ধারে যোগ দিচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তার নেতাদের চামচা বৃত্তিতে, যেখানে তারা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও অপরাধমূলক ব্যবসা তথা মাদক বিক্রয় ও চাঁদাবাজিতে।

এদিকে নগরীর পার্কগুলো নিয়েও শুরু হয়েছে কর্তৃপক্ষের বানিজ্য! নগরীর গোলকমনি পার্কটি কেসিসি কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই ঠিকাদারদের নিকট মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দিয়ে দিয়েছে। নগরীর পার্কগুলি সব ভাড়া দেওয়া হচ্ছে, এরকম আজগুবি কান্ডই চলছে এখন এ শহরে। এর পাশাপাশি অন্যান্য পার্কগুলি পৌঁছেছে ধ্বংসের দার প্রান্তে। সেগুলি আর পার্ক নেই, হয়ে পড়েছে পার্ক’র কংকাল। কোন কোনটির মধ্যের বড় বড় গর্তে পানি জাময় দিব্যি মাছেরা আবাস গড়েছে যা সেচে পাড়ার ছেলেদের চলছে মৎস্য শিকার! এ হ’ল নাগরীক সেবার চমৎকার নিদর্শন।

এ বিষয়ে প্রাক্তন ক্রিকেটার জাহিদুল আলম বলেন, খুলনা মহানগরী থেকে সকল প্রকার খেলাধুলা উঠে গেছে এবং তার জায়গা দখল করেছে মাদক সহ বিভিন্ন অপকর্ম। এ অবস্থায় খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে নগরীর যুব সমাজের পরিণতি হবে ভয়াবহ।

একজন অবসর প্রাপ্ত ব্যবসায়ী মোঃ আক্তার হোসেন বলেন, পৃথিবীর সকল প্রান্তেই কিশোর এবং যুব সম্প্রদায় ব্যাস্ত থাকে পড়ালেখা ও খেলাধুলা নিয়ে। এতে তারা শারীরীক ও মানসিক ভাবে সুস্থ্য থাকে, সমাজও সুন্দর থাকে। তিনি বলেন, এক সময় খুলনা মহানগরীতেও গড়ে ওঠে খেলাধুলা’র সংস্কৃতি। প্রচুর মাঠ ছিলো ফলে সকলের খেলাধুলার সুযোগও ছিলো। তখন মাদক কি তা যুব সম্প্রদায়ের জানা ছিলো না। তিনি বলেন, আবারও নগরীতে খেলাধুলার সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে হবে, আর তার দায়িত্ব নগর কর্তৃপক্ষ, রাজনৈতিক নেতা, নাগরীক নেতা ও ক্রিড়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ সহ সংশ্লিষ্ট সকলের। যদি তা সম্ভব না হয় তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিশ্চিত ধ্বংস হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা নাগরীক ফোরামের চেয়ারপার্সন শেখ আব্দুল কাইয়ূম বলেন, খুলনা মহানগরীর খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে এবং এজন্য কেসিসি, কেডিএ ও ক্রিড়া সংস্থাকে মূল উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং তাদের সহয়তায় রাজনীতিক, সামাজিক সংগঠন সহ সকল কে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, খেলাধুলার ব্যাবস্থা নেই বলে তার স্থান দখল করেছে মাদক। এ অবস্থায় ‘আমাদের সন্তানদের বাঁচাতে ব্যাপক ভাবে খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, অন্যথায় তাদের ধ্বংস ও সমাজ নষ্ট হওয়ার জন্য যারা নগর কর্তৃপক্ষ তারাই দায়ী থাকবেন।’

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *