কয়রায় বাঘের চামড়া ও অস্ত্র উদ্ধার, সুন্দরবনে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ৬ বাঘ শিকারী নিহত

এম, রকিব হাসান, রিয়াসত আলী, কয়রা (খুলনা)থেকে:
সুন্দরবনের কয়রা উপজেলার মাদারবাড়িয়া খালের উত্তর পাশে পুলিশের সাথে বনদস্যু বাঘশিকারী ইলিয়াস-জাহাঙ্গীর বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধে ছয়জন নিহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনটি বাঘের চামড়া এবং অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় কয়রা থানার অফিসার ইনচার্জ হরেন্দ্রনাথ সরকারসহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। রোববার বিকেল পৌণে ৪ টার দিকে এ বন্দুযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

কয়রা থানার ওসি হরেন্দ্র নাথ সরকার জানান, সুন্দরবনের ত্রাস ইলিয়াস ও জাহাঙ্গীর বাহিনীর সদস্যরা শনিবার দিবাগত রাতে বনে হত্যা করা তিনটি বাঘের চামড়া পাচার করছে এই খবর পেয়ে চরামুখা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। চরামুখা এলাকার আব্দুল গাজীর ছেলে শফিকুলের ঘর থেকে তিনটি চামড়া উদ্ধার করা হয়। এ সময় পুলিশ শফিকুলকে গ্রেফতার করে। সে বনদস্যু ইলিয়াস বাহিনীর সদস্য।

পরে তাকে নিয়ে পুলিশ সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া এলাকায় অভিযান চালায়। দুপুরের পর পুলিশ মান্দারবাড়িয়া খালের উত্তরপাশে অভিযান শুরু করে। এ সময় বনদস্যুরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালায়। গুলিতে শফিকুল ইসলাম গাজি নিহত হয়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এক পর্যায়ে বনদস্যুরা পালিয়ে গেলে পুলিশ তাদের আস্তানায় তল্লাশী চালায়। তল্লাশী চালিয়ে সেখান থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনসার সানা পিতা মোংলাই সানা, সাং চরামুখা, সিদ্দিক সানা পিতা সৈয়দ আলী সানা, সাং চরামুখা, বাপ্পি হোসেন পিতা জমাত ঢালী, চরামুখা, মজিদ গাজী পিতা জহুরুল গাজী, সাং জোড়শিং ও মামুন গাজী পিতা আব্দুল গাজী’র লাশ পড়ে থাকতে দেখে। সেখান থেকে ৪ টি বিদেশী একনলা বন্দুক ও একটি পিস্তল উদ্ধার হয়।

ওসি আরো জানান, নিহতরা দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণীর চামড়া পাচারসহ বনজীবিদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করে আসছিলো। তাদের অত্যচারে জেলে বাওয়ালীরা সব সময় আতঙ্কের মধ্য দিন অতিবাহিত করেছে।

এ ঘটনায় কয়রা থানার অফিসার ইনচার্জ হরেন্দ্রনাথ সরকার, এস আই আব্দুল আজিজ,এস আই মনিরুজ্জামান, এ এস আই মিজান,পুলিস কনেস্টেবল অলিয়ার ও আল আমিন আহত হয়েছেন। এক মাস আগে একটি বাঘ হত্যার পর গর্ত করে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। এর আগে চামড়া ছিলে পাচার করা হয়। দীর্ঘ দিন মাটির নিচে থাকার পর হাড়গুলো মাংস ও রক্ত থেকে আলাদা হলে মাটি থেকে তুলে পাচারের চেষ্টা করা হয়।

এদিকে রোববার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি এস এম মনির-উজ জামান বলেন, মজিদ গাজীসহ ৬ জনের তথ্যের ভিত্তিতে সকাল থেকে ৪/৫ জায়গায় অভিযান চালানো হয়। বিকেলে কয়রা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে মান্দারবাড়িয়া এলাকায় অভিযান গেলে পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা বনদস্যুদের সাথে বন্দুকযুদ্ধ হয়। এতে ৬ জন নিহত হয়।

তিনি জানান, এরা দীর্ঘদিন থেকে জেলে-বাওয়ালীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় এবং বন্যপ্রাণী শিকার করে আসছিল। ঘটনাস্থল থেকে রান্নার সরঞ্জাম চাল-ডাল ও হাড়ি-পাতিল পাওয়া গেছে। ওই স্থানটি তারা আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করতো। তাদের ধরার জন্য এক সপ্তাহ আগে থেকে অভিযান শুরু হয়। অপর দিকে এলাকাবাসী জানায় বাঘ শিকারের জড়িত মূল হোতা মজনু (বরিশাল্লা) ও আছাদুজ্জামান বুল বুল ধরা ছোয়ার বাইরেই আছে। পুলিশ তাদের কে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে পারলে অনেক অজানা কাহিনী উদঘাটন করতে পারবে বলে একটি সুত্র জানিয়েছে। নিহত সিদ্দিক সানা বেশ কয়েক বছর পূর্বে অস্ত্র সহ ধরা পড়ে ডাকাতী মামলায় ১০ বছর জেল জরিমানা খেটে মুক্তি পায়। এ ছাড়া নিহত আনছার সানা কয়েক বছর পূর্বে বৈঠা দিয়ে বন বিভাগের কর্মচরীদের মারাত্মক ভাবে জখম করলে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৪বছর সাশ্রম সাজা দেয়। তা ছাড়া আরো একটি মামলাতেও ১বছর সাজা খেটে সে মুক্তি পায়। দক্ষিন বেদকাশীর এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনে মায়াবী হরিণ শিকার ও বিভিন্ন প্রজাতীর বন্য প্রাণী ধরে পাচারের সাথে জড়িত ছিল বলে এলাকাবাসী জানায় ।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ ,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *