বেতন স্কেলে আন্তঃ ক্যাডার বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন, সবার উপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে প্রশাসন ক্যাডার

অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে আন্তঃ ক্যাডার বৈষম্য নিরসন ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে বিসিএস সমন্বয় পরিষদ (২৬ ক্যাডার), খুলনা’র উদ্যোগে আজ খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমন্বয় পরিষদ’র আহ্বায়ক ডাঃ বাহারুল আলম।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে নিরলস কাজ করেযাচ্ছে ২৬টি ক্যাডার, নন ক্যাডার ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের কর্মীরা, অথচ যখন কোন প্রশাসনিক সংস্কার বা বেতনস্কেল নির্ধারণ করা হয় তখন ২৬ ক্যাডারের অফিসার-ননঅফিসারগণ বৈসম্যের শিকার হন।

তিনি বলেন, জাতীয় বেতনস্কেলে যে ব্যাখ্যা দিয়ে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাদ দেওয়া হয়েছে তা সঠিক নয়। এর ফলে একই ব্যাচ ও বিভিন্ন পর্যায়ের অফিসারদের বছরের পর বছর একই বেতনস্কেলে অবস্থান করতে হবে। ২০০৯ সালের বেতনস্কেল অনুযায়ী একজন অফিসার নবম গ্রেডে যোগদানের পর চার বছর পর সিলেকশন গ্রেড হিসেবে ৭ম গ্রেডে উন্নিত হন। চাকুরির মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হলে তিনি ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পান, এবং চাকুরির মেয়াদ ১০ বছর পূর্ণ হলে একজন অফিসারের পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতি পাওয়ার কথা, কিন্তু পদ কম থাকায় পদোন্নতি না পেলেও সিকেশন গ্রেড থাকায় তারা পঞ্চম গ্রেডের স্কেল লাভ করেন ও অর্থিক সুবিধাগুলি ভোগ করেন। পঞ্চম গ্রেডের স্কেল প্রাপ্তির আট বছর পূর্ণ হলে তিনি চতুর্থ গ্রেডের টাইম স্কেল পান। এর ফলে একজন অফিসার পদোন্নতির সুযোগ না পেলেও আর্থিক সুবিধাদি পাওয়ার ফলে উৎসাহের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি বলেন, কিন্তু ২০১৫ জাতিয় বেতন স্কেল অনুযায়ী একজন অফিসার নবম গ্রেডে যোগদানের পর চার বছর পর তিনি আর সিলেকশন গ্রেড হিসেবে সপ্তম গ্রেডে যাওয়ার সুযোগ পাবেন না। এর ফলে যে সকল সার্ভিসে পদোন্নতির সুযোগ আছে তারা উচ্চতর গ্রেডস্কেলে বেতন-ভাতাদি পাবেন, আর যে সকল সার্ভিসে পদোন্নতির সুযোগ কম, সিলেকশন গ্রেড না থাকায় তারা বছরের পর বছর একই পদে চাকুরি করবেন এবং নিম্ন গ্রেডস্কেলে বেতন-ভাতাদি পাবেন যা এক চরম বৈষম্য। এর ফলে পদ এবং আর্থিক বঞ্ছনার শিকার সরকারী কর্মীদের মধ্যে কর্মে অনিহার সৃষ্টি হবে।

তিনি বলেন, সিলেকশন গ্রেড বন্ধ হওয়ায় বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পদ অবনমন হয়েছে। পক্ষান্তরে, সরকারের বিশেষ পদ হিসেবে চিহ্নিত উপ-সচিব থেকে ততোর্দ্ধ পর্যায়ে নির্ধারিত পদের চেয়ে অতিরিক্ত পদে পদোন্নতি দেওয়ায় প্রশাসন ক্যাডারের অফিসারগণ যথাসময়ে পদোন্নতি পাচ্ছেন, কিন্তু অন্যান্য ক্যাডারের অফিসারগণ সুপার নিউমারি পদে পদোন্নতির সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা পরিষদে হস্তান্তরিত ১৭টি দপ্তরের অফিসার-ননঅফিসারদের বেতন-ভাতাদি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের যৌথ স্বাক্ষরে প্রদান করা হবে বলে মন্ত্রী পরিষদ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত দুঃখজনক ও অবমাননাকর, কারণ, এ সকল অফিসারদের অধিকাংশই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের চেয়ে সিনিয়র।

তিনি বলেন, সরকারের ক্যাডার-ননক্যাডার সকল কর্মচারীই সরকারে অধিন, অন্য কোন ক্যাডারের অধিন নয়, কিন্তু প্রশাসন ক্যাডার আজ দেশের অন্য সকল ক্যাডার-ননক্যাডার কর্মচারীদের উপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে, তাদের আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং তাদের সম্মানহানির পথ তৈরী করছে, যা চরম অন্যায় এবং বাংলাদেশের সংবিধান পরিপন্থি।

তিনি বলেন, ২৬ ক্যাডারের অফিসার-ননঅফিসারগণ নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থা নিরসনে তিনি সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বিসিএস সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব ফারুকে আজম মোঃ আব্দুস সালাম, কৃষিবিদ প্রফুল্ল কুমার সরকার, এস এম ফেরদৌস সহ ২৬ ক্যাডারের বিপুল সংখ্যক অফিসার-ননঅফিসার উপস্থিত ছিলেন।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ ,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *