শেরপুরের হায়েনা কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর

কামারুজ্জামান

কামারুজ্জামান

বাংলাদেশের ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে গণহিত্যার অভিযোগের মামলায় আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাকিস্তানের দোসর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

 আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন জানান, রাত সাড়ে ১০ টায় ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

 ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তার হাতে থাকা লাল রুমাল মাটিতে ফেলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জল্লাদরা ফাঁসি কার্যকর করেন। ফাঁসির দড়িতে দীর্ঘক্ষণ ঝুলে থাকার পর কামারুজ্জামানের মৃত্যু নিশ্চিত হলে তাকে দড়ি থেকে নামানো হয়। এরপর দায়িত্বরত সিভিল সার্জন আবদুল মালেক মৃধা তার ঘাড়, হাত ও পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

 ৬ এপ্রিল সকাল ৯টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন।

বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হলেন— বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

 সোহাগপুরের বিধবাদের বিজয় চিহ্ন প্রদর্শন

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯ মে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া বাকি দু’টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে তাকে খালাস দেওয়া হয়।

 অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৫ জুলাই ভোরে কামারুজ্জামানের পরিকল্পনা ও পরামর্শে রাজাকার, আলবদরসহ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর গ্রাম ঘিরে ফেলে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১২০ জন পুরুষকে ধরে এনে হত্যা করে এবং গ্রামের অনেক নারীকে ধর্ষণ করে।

 অন্য অভিযোগে বলা হয়ে, ১৯৭১ সালের ২৩ আগস্ট মাগরিবের নামাজের সময় গোলাম মোস্তফা তালুকদারকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা। কামারুজ্জামানের নির্দেশে তাকে সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে বসানো আলবদর ক্যাম্পে রাখা হয়। মোস্তফার চাচা তোফায়েল ইসলাম কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে তার ভাতিজাকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু ওই রাতে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা গোলাম মোস্তফা ও আবুল কাশেম নামের আরেক ব্যক্তিকে মৃগি নদীর উপর শেরি ব্রিজে নিয়ে গুলি করে। গুলিতে গোলাম মোস্তফা নিহত হলেও হাতের আঙ্গুলে গুলি লাগায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বেঁচে যান আবুল কাশেম।

 কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে আনীত তিন নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দেন।

 

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *