সুন্দরবনে মোবাইল টাওয়ার, জীববৈচিত্র্য পরিবেশ ও ইকোট্যুরিজম হুমকির মুখে

সুন্দরবন'র কটকায় স্থাপিত মোবাইল ফোন'র টাওয়ার

সুন্দরবন’র কটকায় স্থাপিত মোবাইল ফোন’র টাওয়ার

সুন্দরবনের কটকা ও নীলকমলে মোবাইল ফোন’র টাওয়ার স্থাপন করে সার্বক্ষণিক তেজস্ক্রিয় ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ বিকিরণ নিশ্চিৎ করার মাধ্যমে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশকে হত্যা করা হয়েছে। সেই সাথে ইকোট্যুরিজম’র ধারণার মূলে করা হয়েছে কুঠারাঘাত, অভিযোগ দেশী-বিদেশী পর্যটকদের।

ইকো-ট্যুরিজম কিঃ  বিশেষজ্ঞদের মতে ইকো-ট্যুরিজম হ’ল দায়িত্বশীল পরিবেশ সচেতন ভ্রমণ ব্যবস্থাপনা, যা প্রাকৃতিক পরিবেশের বিন্দুমাত্র ক্ষতি না করেই সম্পন্ন করতে হবে। এখানে মূলত প্রাকৃতিক পরিবেশকে দুষণ মুক্ত রাখার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। সেই সাথে বন নির্ভর মানুষদের বিভিন্ন ভাবে এই পর্যটনের সাথে সম্পৃক্ত করা, যাতে তাদের বননির্ভরতা কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হয়।

মোবাইল ফোনের টাওয়ার কেন বিপদজনকঃ  বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মোবাই ফোনের টাওয়ারগুলি যে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বা তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের বিকিরণ ছড়ায় তা রেডিও এ্যাক্টিভ বা তেজস্ক্রিয়, যার প্রভাবে মানব দেহের মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে মানব দেহে অবসাদ, ঝিমুনি ভাব, স্মৃতিশক্তি লোপ, মাথাব্যাথা, হজমশক্তি কমে যাওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মত সমস্যা তৈরী হচ্ছে। মোবাইল ফোন ব্যবহার না করেও এই একই ধরনের ক্ষতির শিকার হচ্ছে জীবজন্তু ও বৃক্ষরাজি তথা প্রাকৃতিক পরিবেশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)’র বিশেষজ্ঞগণ এক সতর্ক বার্তায় জানিয়েছেন যে, মোবাইল ফোনের টাওয়ার থেকে বিকিরিত রেডিও এ্যাক্টিভ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। ১০ বছর ধরে ১৩টি দেশে তাদের করা সমীক্ষায় বলা হয়েছে যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা মোবাইল ফোনের টাওয়ারগুলির বিকিরণ নিঃশব্দে ডেকে আনছে মহা বিপদ!

সুন্দরবন কেন ভ্রমণের কেন্দ্রবিন্দুঃ  সুন্দরবন ভ্রমণে কেন আসেন জানতে চাইলে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সুন্দরবনের কটকা-কচিখালীতে ভ্রমণরত জাপানী পর্যটক কিওহিকো মিয়াতা ও লেইহাম মিয়াতা বলেন, “আমরা এক ধরনের ঘোরের মধ্যে আছি, পৃথিবীতে এমন আশ্চর্য ও ভয়ঙ্কর সুন্দর জায়গা আছে সুন্দরবন দেখার আগে পর্যন্ত আমাদের কোন ধারণা ছিলো না।” তারা অরও বলেন, “একটা বিষয় আমাদের জানা ছিলো আর তা হ’ল সুন্দরবন সম্পূর্ণ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ বা বৈদ্যুতিকচুম্বকীয় তরঙ্গ মুক্ত এলাকা, যেখানে মানুষ, জীবজন্তু ও বনের উদ্ভিদরাজির উপর প্রতি মূহুর্তে বৈদ্যুতিকচুম্বকীয় তরঙ্গের বোমা বর্ষিত হচ্ছে না। আর শুধু এ কারণেই আধুনিক বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ সুন্দরবন ভ্রমণে আগ্রহ বোধ করেন।”

বিদেশী পর্যটকদের অভিযোগঃ  সুন্দরবনের অভ্যন্তরে মোবাইল ফোনের টাওয়ার স্থাপন করায় গভীর হতাশা ও অভিযোগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন দেশের পর্যটকগণ। গত ২৮ নভেম্বর কটকা-কচিখালী ভ্রমণকালে কটকায় স্থাপিত মোবাইল টাওয়ার দেখে তারা এ অভিযোগ করেন। জার্মান পর্যটক ফ্রেডরিক, ফ্রেন্স পর্যটক সার্লি, বৃটিশ পর্যটক মেরিয়ানা ও পলিন এবং অমেরিকান পর্যটক হ্যারিস বলেন,“ আমরা জানি যে সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এবং সম্পূর্ণ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ বা বৈদ্যুতিকচুম্বকীয় তরঙ্গ মুক্ত এলাকা। ফলে এখানে ইকো-ট্যুরিজম গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখন দেখছি এখানেও নিরবছিন্ন রেডিও এ্যাক্টিভ বৈদ্যুতিকচুম্বকীয় তরঙ্গের বোমা বর্ষনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে যা অত্যন্ত হতাশা জনক। এর ফলে ইকো-ট্যুরিজম গড়ে তোলার সকল স্বপ্নই ভেঙে গেলো। কারণ, প্রাকৃতিক পরিবেশ তেজস্ত্রিয় তরঙ্গের বিকিরণের মাধ্যমে ধ্বংস করে কি ভাবে প্রকৃতি বান্ধব পর্যটন সম্ভব ?”

সুন্দরবন অভ্যন্তরে মোবাইল ফোন’র টাওয়ার স্থাপনের মাধ্যমে বৈদ্যুতিকচুম্বকীয় তরঙ্গ বিকিরণের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্যুর অপারেটর রূপান্তর ইকো-ট্যুরিজম’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল আজম ডেভিড বলেন, সুন্দরবনে মোবাইল ফনের টাওয়ার স্থাপনের ফলে পরিবেশ ও ইকো-ট্যুরিজমের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।

সুন্দরবনের অভ্যন্তরে মোবাইল ফোনের টাওয়া স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন অফিসার মোঃ জহির উদ্দিন আহমদ বলেন, মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্তে পশ্চিম সুন্দরবনের নীলকমল ও পূর্ব সুন্দরবনের কটকায় টেলিটক’র দুইটি টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে।

এতে পরিবেশের কি ধরণের ক্ষতি হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উচ্চ আদালত এ বিষয়ে আনবিক শক্তি কমিশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা চেয়েছে। তাদের রিপোর্ট প্রকাশের পরে বিষয়টি বোঝা যাবে।

আরও টাওয়ার বসানো হবে কি-না জানবে চাইলে তিনি বলেন, আনবিক শক্তি কমিশনের রিপোর্ট অনুকুল হলে বনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন এলাকায় আরও টাওয়ার বসানো হবে।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ ,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *