রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাগ্রসর বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকান্ডের বিচারসহ ১৮ দফা দাবি জানিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে। সমিতির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ ৪ মে এ স্মারকলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. আহমেদ আহসানুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. সারওয়ার জাহান স্বাক্ষরিত এই স্মারকলিপিতে উল্লিখিত ১৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীর হত্যাকান্ডসহ বিগত সময়ে প্রতিক্রিয়াশীল জঙ্গিবাদিদের ঘৃণ্য অপতৎপরতায় সংঘটিত সকল হত্যাকান্ড দ্রুতবিচার আইনের আওতায় আনতে হবে এবং হত্যাকারী ও হত্যার হুকুমদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, এ জাতীয় হত্যাকান্ডের বিচারের জন্য বিশেষ আইন প্রণয়নপূর্বক ‘মৌলবাদী অপরাধ দমন ট্রাইবুনাল’ গঠন করতে হবে, হত্যার উদ্দেশ্যে মৌলবাদীদের তালিকাভুক্ত ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, ‘জাতীয় মৌলবাদ নির্মূল কমিশন’ গঠন করতে হবে, রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান ফিরিয়ে আনার জন্য বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃস্থাপন করতে হবে, ধর্মভিত্তিক-রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল বিদ্যাপীঠে ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, লিঙ্গবৈষম্যের ভিত্তিতে পরিচালিত সকল ধরনের কার্মকান্ড বন্ধ করতে হবে, শিক্ষাব্যবস্থার সকল ধরন ও স্তরে সকল শিক্ষার্থীর জন্য অভিন্ন শিক্ষানীতি চালু করতে হবে এবং ধর্মভিত্তিক শিক্ষার প্রসার বন্ধ করতে হবে, শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে উদ্ভাবনমূলক মৌলিকচিন্তার স্ফূরণ বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তার প্রকাশ ও বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, সকল নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, সকল মানুষের স্বধর্ম পালন ও ভাবাদর্শচর্চার নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তিকচর্চায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করতে হবে, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চালসহ সারাদেশে আবহমান বাংলার লোকসংস্কৃতিচর্চার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১’ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে, মৌলবাদীদের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় পরিচালিত রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম ও গণমাধ্যমের যেকোনো বিষয়ে এইসব প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচারসহ সকল প্রকার কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের নামে বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি, নারী ও ভিন্নধর্ম ও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার রোধকল্পে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ধর্ম, ভাষা, ভূমি ও সংস্কৃতির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং ভিন্নধর্মী জীবনাদর্শ ও লিঙ্গভিত্তিক আচরণগত স্বকীয়তা সম্পন্ন সকলের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
এসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মাধ্যমে ধারাবাহিক নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে আচার্য রাষ্ট্রপতির সার্বিক সহমত ও দিকনির্দেশনা প্রত্যাশা করে যথার্থ-কর্তৃত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ