খুলনায় নববর্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আর বৈশাখী মেলায় উৎসবমুখর পরিবেশ

মহাআড়ম্বর আর উদ্দিপনায় খুলনায় পালিত হয় বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ ১৪২৩। সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। প্রধান প্রধান শোভাযাত্রা বের করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন। এর সাথে যুক্ত হয় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ উদযাপনে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলা উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। এ উপলক্ষ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। এদিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় নানা রঙের বর্ণিল ‘আলপণার শাড়ি’ পরে নিজেকে মেলে ধরে।

পহেলা বৈশাখ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান নগরীর শিববাড়ী মোড়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন। পরে ভাইস-চ্যান্সেলরের নেতৃত্বে নগরীর শিববাড়ী মোড় থেকে ময়লাপোতা মোড় হয়ে রয়্যাল চত্বরে গিয়ে বাংলা নববর্ষের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শেষ হয়। শোভাযাত্রায় ট্রেজারার খান আতিয়ার রহমান, ডিনবৃন্দ, পরিচালক, রেজিস্ট্রার, ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক, প্রভোস্টবৃন্দ, মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি এবং কমিটির সদস্য-সচিব, বিভাগীয় প্রধানগণ, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশ নেন। নানা রংয়ের বেলুন, ফেস্টুন, বাঘ, হরিণ, হাতি, দোয়েলসহ বর্ণিল সাজের সাথে বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলাসহ শোভাযাত্রাটি যখন এভিনিউ পথে এগোছিলো আশপাশের মানুষ হাত নেড়ে অভিনন্দন জানায়। রয়েল মোড়ে এসে পৌঁছিলে ভাইস-চ্যান্সেলর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শোভাযাত্রাটির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

তিনি সাফল্যের সাথে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাটি আয়োজন ও তাতে অংশগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনিস্টিটিউট, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক এবং সকল শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী এবং কর্মচারি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, নিরাপত্তা শাখা, ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের এ উৎসব আমাদের প্রাণের উৎসব। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অসম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ পহেলা বৈশাখের এই অনুষ্ঠানে। বাঙালীর হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও কৃষ্টি বাংলা নববর্ষের মাধ্যমে প্রবাহমান। এরই ধারাবাহিকতায় জীবনের আগামীদিনগুলো যাতে সুন্দর ও সাফল্যের সাথে অতিবাহিত হয় সেই আশা করেন।

পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নেয়। এদিকে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে দলে দলে উৎসবমূখর মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে মেলা উপভোগ করতে।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীবৃন্দের আয়োজনে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ উদযাপিত হয়। ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ আনিছুর রহমান বিশ্বাষ সকাল ৯টায় নগর ভবনের সম্মুখে বেলুন উড়িয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি নগরীতে বর্ষবরণ উপলক্ষে আয়োজিত বর্ণাঢ্য র‌্যালীর নেতৃত্ব দেন। র‌্যালীতে কেসিসি’র প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অংশগ্রহণ করেন।

সকাল সাড়ে ৯টায় ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ আনিছুর রহমান বিশ্বাষ নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে নববর্ষ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ আমাদের সংস্কৃতির অনন্য ধারায় সমৃদ্ধ। এ উৎসব বাঙালীর প্রাণের উৎসব।

তিনি কেসিসিকে নাগরিক সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন আধুনিক ও মডেল সিটি কর্পোরেশন হিসেবে আত্মাপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এ জন্য কাঙ্খিত নাগরিক সেবা প্রদান করতে তিনি কেসিসি কর্মচারীগণকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান। কর্মচারীগণকে সরকার নির্ধারিত সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করা এবং আগামীতে মাস্টাররোলভুক্ত কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতা প্রদানের বিষয়ে বিবেচনা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এছাড়া জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিশেষ করে উদীচী ব্যাপক আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নববর্ষ উদযাপন করে।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *