বাংলাদেশের প্রধান সম্পদ তার জনবল। জনগণের সাহায্যে সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নতি অনেক দূর এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে, পূরন হতে পারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। কিন্তু এর জন্য চাই দক্ষতা। দক্ষতার অভাবে জনগণ প্রায় মূল্যহীন হয়ে পড়ে। অদক্ষ জনবলের উৎপাদনশীলতা কমে যায়, যার জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তার অবদান হয় সীমিত।
আইটি ক্ষেত্রে অতি স্বল্প সময়ে দেশ অনেক এগিয়েছে। কিন্তু এ উন্নতি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তুলনায় নিতান্তই হাটি হাটি পা পা। তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের ছেলেমেয়েরা একটা দূরত্ব পর্যন্ত কাধে কাধ মিলিয়ে চলতে পারছে। যেমন আউটসোর্সিং ক্ষেত্রে। আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সাররা তাদের দক্ষতা দিয়ে এখন মার্কেটের অনেকটা অংশ জুড়ে ই অধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। বিশ্বের উন্নয়নশীল আর দশটা দেশের থেকে আমাদের কাজ পাওয়ার সুযোগ অনেক বেশী, কারণ আমাদের চাহিদা (রেট) অনেক কম, ফলে উন্নত দেশের ফ্রিল্যান্সারদের থেকে আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সাররা তুলনামূলক কাজ বেশী পায়। কিন্তু দেখা যায় দক্ষতার অভাবে ক্লায়েন্ট কে সন্তুষ্ট করা প্রায়সই কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে, ফলে ক্লায়েন্ট বিরক্ত হয়ে বিমুখ হয়ে পড়ে যা শুধু ঐ ফ্রিল্যান্সারের জন্যই ক্ষতিকর নয়, ক্ষতিকর দেশের জন্যও, কারণ ওই ক্লায়েন্ট পরবর্তীতে দেশের অন্য কাউকেই কাজ দেয় না।
এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী ভাবে ও অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়েছে নানা উদ্যোগ। তবে এই উদ্যোগগুলোর অধিকাংশ হয়ে পড়েছে রাজধানী কেন্দ্রিক, যার ফলে এই সুযোগ গুলো নিতে পারছে না দেশের অন্যান্য এলাকার অধিবাসিরা।
এই সমস্যা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা পরিবর্তন-খুলনা সম্প্রতি দেশের স্বনামধন্য আইটি প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটি ইনিস্টিটিউট’র একটি শাখা খুলতে সক্ষম হয়েছে খুলনা শহরে। অবহেলিত খুলনাবাসীদের আইটি ক্ষেত্রে দক্ষ হিসাবে গড়ে তোলা এবং বেকারত্বের কারণে যে সকল যুবকরা বিদেশে পাড়ী জমানোর চিন্তা করছে তাদেরকে দেশে বসেই প্রশিক্ষন নিয়ে অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ।
গত ছয় মাসে গ্রাফিক্স ডিজাইনের ৩টি এবং ওয়েব ডিজাইনের ২ টি ব্যাচে মোট ৭৫ জন প্রশিক্ষনার্থী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ চলাকালীনই মার্কেট প্লেসে কাজ পেয়েছে এবং কোর্স শেষে এপর্যন্ত দেখা গেছে প্রায় ৭০ শতাংশ প্রশিক্ষণার্থী বিভিন্ন মার্কেট প্লেসে কাজ করছে। সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, ১ম ব্যাচের প্রশিক্ষনার্থী মোঃ হাসনাত, উম্মে সালমা ও সুবর্না প্রশিক্ষণ শেষে এই প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনিশিপ করে এখন প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছে, পাশাপাশি তারা অনলাইনেও কাজ করছে এবং মাসে গড়ে প্রায় এক হাজার ডলার আয় করতে সক্ষম হচ্ছে। এছাড়া অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খালিপুর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুরে বাসিন্দা অঙ্গন ৪ হাজার ডলারের একটি প্রোজেক্ট-এ কাজ করছে, তার সাথেই প্রশিক্ষণ নিয়েছে এমন ৪ জনকে নিয়ে টিম করেছে, এছাড়াও প্রতিনিয়তই ছোট বড় অনেক কাজই করছে তারা। দিঘলীয়ার বাসিন্দা জিম এর সাথে কথা বলে জানা যায় যে সে এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ডলারের কাজ করেছে। এছাড়া খালিশপুরের শুভ, পশ্চিম বানিয়াখামারের সিলভি, খানজাহান আলী রোডের আদনান, সেনহাটির বাকি বিল্লাহ, মৌলভী পাড়ার সঞ্জয় কুমার পাল, বাগেরহাটের খায়রুল বাশার, পানখালী চালনার সোয়েব সবাই প্রতি মাসে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য আয় করতে সক্ষম হচ্ছেন। এছাড়া অন্য প্রশিক্ষনার্থীরা বিভিন্ন মার্কেট প্লেসে অল্প পরিমানে হলেও আয় করে চলেছেন। বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ওয়েব ডিজাইনে ৫ টি ব্যাচ চলছে। প্রশিক্ষণ গ্রহণে ইচ্ছুকদের জন্য রয়েছে ৩ টি ফ্রি ক্লাস করার সুযোগ। এছাড়াও নিয়মিত আয়োজন করা হয় ফ্রি সেমিনার, যেখানে আউটসোর্সিং বিষয়ে প্রাথমিক ধারনা প্রদান করা হয়। এবং প্রশিক্ষনার্থীকে তার উপযুক্ত কোর্সটি বাছাই করতে সাহায্য করা হয়।
এভাবেই আইটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খুলনার যুবক-যুবতীদের দক্ষ করে তুলছে পরিবর্তন-খুলনা পরিচালিত ক্রিয়েটিভ আইটি খুলনা শাখা। সকলের প্রচেষ্টাতেই দেশর জনসম্পদ একদিন হবে আইটিতে দক্ষ জনসম্পদ।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ