বাঘ হত্যা বন্ধ না করলে সুন্দরবন রক্ষা করা যাবে না ঘটবে জলবায়ু বিপর্যয়

বাঘ হত্যা বন্ধ না করলে সুন্দরবন রক্ষা করা যাবে না, বাঘ হবে বিলুপ্ত। বাঘ এবং তার খাদ্য (শিকার) সংরক্ষণে সুন্দরবন সংলগ্ন মানুষের সংশ্লিষ্টতা বিষয়ক এক কর্মশালা গতকাল খুলনা মহানগরীর একটি হোটেলের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তারা এ সকল থা বলন। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগিয় কমিশনার সুবাস চন্দ্র সাহা।

প্রধান অতিথি তার বক্তৃতায় বলেন, ‘আমাদেও গর্বের সম্পদ সুন্দরবন, অথচ আজ আমরা সেই গর্বের সুন্দরবনের বাঘ হত্যার প্রতিযোগীতায় নেমেছি। যে ভাবেই হোক বাঘকে আমাদেও রক্ষা করতেই হবে।’

সভায় বক্তারা বলেন, সুন্দরবন আর তার বাঘ আমাদের জাতীয় পরিচয়ের প্রতিক। বন বিভাগের ২০১০ সালের ঘোষণা (গনণা) অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিলো ৪৪০টি, আর ১০১৫ সালের ঘোষণা অনুযায়ী এখন সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা মাত্র ৮৬ টি থেকে ১০৬টি! অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এ দেশে এখন বাঘ হত্যার প্রতিযোগিতা চলছে। এর পরিস্কার অর্থ হ’ল আমাদের জাতীয় পরিচয়ের প্রতিককে হত্যার প্রতিযোগিতা, যা আসলে দেশদ্রোহীতা।

বাঘের গোত্র পরিচয়, খাদ্যাভ্যাস, বসবাসের এলাকা এবং বাঘ সংরক্ষণে সুন্দরবন সংলগ্ন মানুষের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বিভাগীয় বন আধিকারিক ( ওয়াইল্ড লাইফ) পশ্চিম বন বিভাগ, মদিনুল আহসান, প্রফেসর নাজমুস সাদাত এবং উপ-বন সংরক্ষক বশির আল মামুন।

আলোচকগণ বলেন, প্রথিবীতে বর্তমানে মাত্র ১২টি দেশে বাঘ বাস করে। ইতিমধ্যে অনেক দেশ থেকেই বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে বাঘ হত্যা করে চোরাকারবারের জন্য। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে মাত্র ৩৮৯০টি বাঘ আছে। আলোচকরা বলেন, সুন্দরবন এবং বাঘের অস্তিত্ব পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। একদিকে যেমন বাঘ না থাকলে সুন্দরবন থাকবে না, অন্যদিকে বন না থাকলে বাঘ থাকবে না। মনে রাথতে হবে বাঘ জলবায়ুর স্থিতিশীলতায়ও অত্যন্ত জরুরী। যে বনে বাঘ থাকে সেখানে মানুষের যাতায়াত কমে এবং উদ্ভিদের ঘনত্ব বাড়ে, আর উদ্ভিদের ঘনত্ব বাড়লে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, এভাবেই বাঘ জলবায়ুর অনুকুল পরিবর্তনে কাজ করে। তাই বাঘ সংরক্ষণ বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত।

বক্তারা বলেন, যারা বাঘ রক্ষা করবে তারাই যদি বাঘ হত্যা ও ব্যবসায় জড়িত হয় তবে কে বাঘ রক্ষা করবে তা ভাবতে হবে। বক্তারা অরও বলেন, আজ পর্যন্ত খাদ্যের অভাবে না খেয়ে বাঘের মৃত্যু হয়েছে এমন কোন নজির নেই। অবশ্যই বাঘের শিকার (খাদ্য)কে রক্ষা করতে হবে, কিন্তু বাঘ হত্যাকারী চোরাকারবারীদের দমন এবং শাস্তির ব্যবস্থা না করে বাঘ রক্ষা করা যাবে না। আর তাদের শাস্তি না হলে সুন্দরবনের ধ্বংসও অনিবার্য। মনে রাখতে হবে জীবীকার তাগিদে সুন্দরবন সংলগ্ন যে সকল মানুষ সুন্দরবনে যায় তারা কেউ প্রত্যক্ষ ভাবে বাঘ হত্যায় জড়িত নয়।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন খুলনা পরিবেশ অধি-দপ্তরের পরিচালক মল্লিক আনোয়ার হোসেন, ওয়াইল্ড লাইফ ডিএফও মদিনুল আহসান, উপ-বন সংরক্ষক বশির উল মামুন, প্রফেসর নাজমুস সাদাত, রূপান্তর ইকো-ট্যুরিজম’র এমডি নাজমুর আজম ডেভিড, সাংবাদিক ফারুক আহমেদ সহ খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক বৃন্দ, গণমাধ্যম কর্মি ও সুন্দরবন ট্যুর অপারেটরগণ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন অফিসার এমডি সাইদ আলী।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *