গত ১৮ জুলাই খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সম্মেলন কক্ষে ময়ূর নদী সংরক্ষন বিষয়ক সভায় প্রধান অতিথি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ আতাহারুল ইসলাম বলেন, ময়ূর নদী সংরক্ষণে সিএস ও আরএস ম্যাপ অনুয়ায়ী সীমানা চিহ্নিত করতে হবে। এটিকে দৃষ্টিনন্দন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় স্বার্থে সকল খাল ও নদীকে তার মূল অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে। খাল-নদী না থাকলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য থাকবেনা। এজন্য সরকার এগুলো সংরক্ষণের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। নদীর স্বাভাবিক গতি অব্যাহত রাখতে যদি কোন বিষয় বাধাগ্রস্থ করে তা প্রথমেই বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। চেয়ারম্যান গল্লামারী ব্রিজের নিচে পানির স্রোতের প্রবাহ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া নদীর পাড়ের ঘাট এবং সীমানা ওয়াল অপসারণ করতে বলেন। তিনি আরও বলেন, নগরবাসীর চিত্তবিনোদনের জন্য অনতিবিলম্বে নদীর তীরে লিনিয়ার পার্ক নির্মাণ কাজ সিটি কর্পোরেশনকে সম্পন্ন করতে হবে। তিনি নদীর পানি বিশুদ্ধ রাখতে কলকারখানা ও ড্রেনের পানি সরাসরি নদীতে না ফেলানোর পরামর্শ দেন এবং এজন্য নদী পাশে বর্জ্য ও পানি শোধনাগার তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তবে তার এ সকল বক্তব্যকে সাধারণ নাগরিক এবং নগরীর বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা বরাবরের আমলাতান্ত্রিক বাকচাতুর্য বলেই মনে করছেন। কারণ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের শত শত নদী-খাল জনগণ সহ রাজনৈতিক-সামাজিক প্রতিবাদ সত্বেও জেলা প্রশাসন লীজ দিচ্ছে কয়েক দশক ধরে, আর লীজ ধারীরা ওই প্রশাসনেরই সহয়তায় লীজ’র শর্ত ভঙ্গ করে নদী-খালগুলিতে বাধদিয়ে সেগুলিকে মাছের ঘেরে পরিণত করে এবং পর্যায়ক্রমে সেগুলি অবৈধভাবে দখল করতে থাকে। আর এভাবেই এ অঞ্চলের নদী-খালগুলি ভরাট ও দখল করে ধংষ করা হয়েছে কিন্তু জেলা প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে তাদের বাধা দেয় নি এবং লীজ দেওয়া নদী-খালগুলি শর্ত মেনে ব্যবহৃত হচ্ছে কি-না তা কখনও খতিয়ে দেখেনি। অথচ যে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে এ অঞ্চলের নদী-খালগুলির আজ এই ভয়াবহ পরিণতি তাদের বিরুদ্ধে ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ আতাহারুল ইসলাম’ কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণের ইঙ্গিতও না করায় তার প্রদেয় উন্নয়নের সুন্দর সুন্দর বক্তব্যকে এ অঞ্চলের মানুষ গতানুগতিক আমলাতোষোণমূলক কথামালা ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারছে না এবং তার কথার কোনো বাস্তব ফলও আশা করতে ভরসা পাচ্ছে না। তিনি খাল-নদী না থাকলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য থাকবেনা বলেছেন কিন্তু তার চেয়েও হাজারগুণ গুরুত্বপূর্ণ হ’ল খাল-নদী বদ্ধ হয়ে গেলে এ অঞ্চলের ভূমি গঠনপ্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে, ফলে নদীতে বহমান পলি নদীতেই জমে নদী ভরাট হয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে যে প্রক্রিয়া আমলাতন্ত্রের কল্যানে ইতিমধেই শুরু হয়েছে, তা তিনি একবারও বলেন নি, কারণ ভাশুরের নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ। মনে রাখতে হবে পৃথীবির বৃহত্বম সেডিমেন্ট (পলি) বাহি ডেল্টা হ’ল গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ডেল্টা বা আমাদের উপকূল যা বছরে দুই কোটি টন পলি বহন করে। এই পলি যদি উপকূলীয় নদী-খালগুলিতে ঢুকতে না পারে তবে মূলনদীবক্ষে জমে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবেই যা আমলা-প্রশাসনের কল্যাণে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। মনেরাখতে হবে শুধু ড্রেজিং করে এ বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব হবে না, মেগা ড্রেজিং প্রকল্পে বিশ্বব্যাঙ্ক-আইএমফদের সুদের ব্যবসার রমরমা হবে আমলাদের পকেটে দূর্নীতির শত শত কোটি টাকা ঢুকে যাবে কিন্তু ধংস হওয়া নদী-খাল পূর্বাবস্থায় ফিরবে না। এ সকল কথা চেয়ারম্যান সাহেব কিছুই উল্লেখ করেন নি, তাই এওঞ্চলের মানুষ তার কথায় বিশেষ ভরশাও পাচ্ছে না।
উল্লিখিত সভায় অন্যান্যর মধ্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষনিক সদস্য মোঃ আলাউদ্দিন, খুলনা বিআইডব্লিউটিএ’র বন্দর ও পরিবেশ বিভাগের উপপরিচালক কায়সারুল ইসলাম, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ নাজমুল ইসলামসহ গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেসিসি’র প্রধান নির্বাহী অফিসার গোকুল কৃষ্ণ ঘোষ।
পরে চেয়ারম্যান ও সদস্য নগরীর গল্লামারীতে লিনিয়ার পার্ক প্রকল্প এলাকা, নদী দখল ও দূষণ অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের ঘোষণানুযায়ী ণির্মান সম্পন্ন লিনিয়ার পার্ক প্রকল্প’র কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেন যা আসলে একটি হাস্যকর দায়সারা গোছের কর্মকান্ড বলে প্রতিয়মান হয়।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ