রাজধানীতে ‘জেএমবি’র ৫ সদস্য আটক, থার্টিফার্স্ট নাইটে নাশকতার পরিকল্পনা ছিল

রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে নিষিদ্ধ সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। তারা ৩১ ডিসেম্বর রাতে (থার্টিফার্স্ট নাইট) রাজধানীতে নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে বিস্ফোরক সংগ্রহ করছিল।

আজ বুধবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলোÑ মো. রিয়াজ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার ওরফে রাকিব, মো. আবু বিন সাঈম ওরফে বাপ্পি ওরফে অপু, কাজী আবদুল্লাহ আল ওসমান ওরফে আহসান, মো. সোহাগ ওরফে চেয়ারম্যান ও মো. মামুন ওরফে হিমেল। মনিরুল ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর মিরপুরে দারুস সালাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘জেএমবি’র এই পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো জানান, ওই পাঁচজনের হেফাজত থেকে ৩০ কেজি তরল ও পাউডারজাতীয় বিস্ফোরক পদার্থ, বোমা তৈরির বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও বই উদ্ধার করা হয়। মনিরুল জানান, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে ওই পাঁচজন স্বীকার করেছে, তারা জেএমবির পুরোনো ধারার সক্রিয় সদস্য। জেএমবির রাজশাহী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত জিয়া, হায়দার ও শহীদুল্লাহর নির্দেশ ও পরামর্শ অনুযায়ী, ঢাকা শহরে থার্টিফার্স্ট নাইটে নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে বিস্ফোরক সংগ্রহ করছিল।

ব্রিফিংয়ে মনিরুল বলেন, পুরোনো জেএমবির এই সদস্যরা ডাকাতি ও ছিনতাই করে জীবিকা নির্বাহ ও সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে থাকেন। এ রকমই কোনো কিছু করার জন্য তাঁরা ঢাকায় এসেছিলেন। এই গ্রুপের প্রধান রিয়াজ। জানা যায়, রিয়াজ কিছুদিন আগে ভারতে গিয়েছিলেন। সেখানে আরেক জঙ্গি নেতা সালেহউদ্দিন সালেহিনের সঙ্গে দেখা করে তাঁর কাছ থেকে নির্দেশনা নিয়ে দেশে  ফেরেন। গত ১৭ অক্টোবর রাতে তেজগাঁও এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন জেএমবির সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ তখন জানিয়েছিল, জঙ্গি সংগঠনের জন্য অস্ত্র কেনা এবং কারাবন্দী নেতাদের মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের জন্য তাঁরা ডাকাতি করতেন। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, গ্রেফতার হওয়া সাতজন ছিলেন মো. জুয়েল সরকার ওরফে সোহরাব ওরফে সরকার (৩২), মো. রাশেদ ওরফে কাকলীর বাবা (২৭), মো. সেন্টু হাওলাদার ওরফে জাহিদ (২৬), নাজমুল হাসান ওরফে নয়ন ওরফে নরেশ (২৩), মো. আবদুল বাসেদ (২২), মো. কাসেম ওরফে কাওসার ওরফে কাসু (২০) ও মো. আবু বকর সিদ্দিক ওরফে শুভ্র ওরফে আকাশ (২০)। গত অক্টোবরে জেএমবির যে গ্রুপটিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের তথ্যমতে গত মঙ্গলবার এই গ্রুপটিকে গ্রেফতার করা হয়। আশকোনার জঙ্গি আস্তানা ১৯টি তাজা গ্রেনেড সম্পর্কে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, এসব গ্রেনেড ছিল হাতে তৈরি। এর মধ্যে কিছু ছিল বেশ শক্তিশালী। আর সুইসাইডাল ভেস্টের থাকা গ্রেনেডগুলো ছিল শক্তিশালী। সুইসাইডাল ভেস্ট ছিল জঙ্গিদের নতুন প্রযুক্তি। শক্তিশালী গ্রেনেড হলে আত্মঘাতী ওই নারীটির ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, আত্মঘাতী নারীটি যে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তার মধ্যে কিছু ফুটেছে, কিছু ফোটেনি। অভিযানের পর মনিরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে করে বলেছিলেন, আত্মঘাতী নারীটি যখন বিস্ফোরণ ঘটাতে যাচ্ছিলেন, তখন পুলিশও তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল। কিন্তু ময়নাতদন্তে গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বলা হয়, বোমার আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তে গুলির চিহ্ন কেন পাওয়া গেল না, তা জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলি হয়তোবা ওই নারীর শরীরে ঢুকে বের হয়ে গিয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম আরও জানান, আত্মঘাতী বোমায় নিহত নারীর নাম শাকিরা। বাড়ি ভোলায়। তিনি গত অক্টোবরে তেজগাঁও এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া জেএমবির সদস্য রাশেদুর রহমান ওরফে সুমনের স্ত্রী। সুমন গ্রেফতার হওয়ার পরই শাকিরা নব্য জেএমবিতে যোগ দেন।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ ,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *