রিপাবলিক’র গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর মর্যাদাক্রম বিষয়ে পূর্ণ রায় প্রকাশ: জেলা জজদের পদ আট ধাপ উপরে

জেলা জজদের অবস্থান হবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অফিসার, অর্থাৎ সচিবদের সঙ্গে একই স্তরে, তবে সচিবদের আগে জেলা জজদের নাম লিখতে হবে কারণ তাঁদের পদগুলি সাংবিধানিক পদ।

রিপাবলিক’র গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর মর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। একটি রিটের শুনানি শেষে ১৯৮৬ সালে জারি করা পদমর্যাদাক্রম অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেন সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ রায়ে স্বাক্ষর শেষে নিষ্পত্তি করে পর্যবেক্ষণসহ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে পদমর্যাদাক্রম প্রণয়নে একটি গাইডলাইনও দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

প্রায় দুই বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে সেই পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হলো। এই গাইডলাইন অনুসারে নতুন পদমর্যাদাক্রম প্রণীত হলে সাংবিধানিক পদ, অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ এবং অ্যাটর্নি জেনারেল, ন্যায়পাল, নির্বাচন কমিশনার ও সংসদ সদস্যগণ পর্যায়ক্রমে ওপরের দিকে স্থান পাবেন। রায়ের পর্যবেক্ষণ অনুসারে প্রধান বিচারপতির পদমর্যাদা ও স্পিকারের পদমর্যাদা থাকবে একই অবস্থানে। বর্তমান পদমর্যাদাক্রম অনুসারে স্পিকারের অবস্থান তিন এবং প্রধান বিচারপতির অবস্থান রয়েছে চার নম্বরে। এ ছাড়া মন্ত্রিদের সঙ্গে একই পদমার্যাদায় থাকবেন আপিল বিভাগের বিচারপতিরা, প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে একই অবস্থানে থাকবেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা। সচিবদের ওপরে পদমর্যাদা হবে সাংবিধানিক পদ, অর্থাৎ অ্যাটর্নি জেনারেল, ন্যায়পাল, নির্বাচন কমিশনার ও সংসদ সদস্যগণসহ অন্য পদগুলোর। এর পরের অবস্থানে থাকবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা। এ ছাড়া জেলা জজদের অবস্থান হবে প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ অফিসার, অর্থাৎ সচিবদের সঙ্গে একই স্তরে, তবে সচিবদের আগে জেলা জজদের নাম লিখতে হবে কারণ তাঁদের পদগুলি সাংবিধানিক পদ।

মামলার বিবরণে জানা যায়, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব ও জেলা জজ মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে হাইকোর্টে ১৯৮৬ সালের পদমর্যাদাক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। রিটে বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ নিয়ে তিনটি অঙ্গ রয়েছে। শাসন বিভাগে পদমর্যাদাক্রমে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিপরিষদসহ সংশ্লিষ্টরা থাকবেন। এ ছাড়া আইন বিভাগে থাকবেন সংসদের স্পিকার ও সংসদ সদস্যগণ। অন্যদিকে বিচার বিভাগকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। অর্থাৎ এক ভাগে থাকবেন উচ্চ আদালতের বিচারপতিরা এবং অপর ভাগে অধস্তন আদালতের বিচারপতিরা। কিন্তু ১৯৮৬ সালে প্রণীত ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে সংবিধানের বর্ণিত এ বিধিমালা অনুসরণ করা হয়নি। এতে সংবিধানের মূল চেতনা লঙ্ঘন করা হয়েছে। তাই ১৯৮৬ সালে প্রণীত ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স বাতিল করতে রিটে উল্লেখ করা হয়। ওই রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ২০০৬ সালের ১০ ডিসেম্বর সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করে রায় দেন। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরদিন আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। প্রজাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর পদমর্যাদা নির্ণয়ে ১৯৮৬ সালে জারি করা পদমর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল দীর্ঘদিন পর ২০১৫ সালে পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পর্যবেক্ষণে পদমর্যাদাক্রম প্রণয়নে একটি গাইডলাইনও দেওয়া হয়েছে। প্রায় দুই বছর পর সব পর্যবেক্ষণ ও গাউডলাইনসহ রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ করা হয়।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *