প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার উদ্যোগকে মন্ত্রিসভা স্বাগত জানিয়েছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর সময় এখনও আসেনি বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্তব্য করেন তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা ভালো উদ্যোগ। ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ থাকলে দেশের শত শত কোটি টাকার ক্ষতি এবং শ্রমিক-মালিকদের সমস্যা হত। কারখানাগুলোর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছে বলে জানান তিনি। পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, বেতন বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে বিধান আছে, তা হালনাগাদ করারও সুযোগ আছে। (বেতন বাড়ানোর) যে সিস্টেমটা আইনে দেওয়া আছে এখনও স্টেজটা আসে নাই, বলেন তিনি। মালিকপক্ষ ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ২০১৩ সালে সরকারের গঠিত মজুরি বোর্ড বাংলাদেশের পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এরপর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ায় বাজার দর ও জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে জানিয়ে পোশাক শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি বাড়িয়ে ১৬ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। তবে ওই দাবি নাকচ করে বিজিএমইএ বলেছে, বর্তমান মজুরি কাঠামোর অধীনে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা। অভ্যন্তরীণ ও চলমান বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতিতে ‘পোশাক শিল্পের অবস্থা ভালো নয়’ দাবি করে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, এই মুহূর্তে মজুরি বাড়ানো সম্ভব নয়। বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ কয়েকটি দাবিতে সপ্তাহখানেক বিক্ষোভের পর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাইপাইল, জামগড়া, নরসিংহপুর ও এর আশপাশের এলাকার ২৫টি কারখানার শ্রমিকরা গত গতকাল সোমবার কাজ বন্ধ করে দেয়। এরপর কয়েকজন মন্ত্রী শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলেও পরদিন ৫৫টি কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভে যোগ দেন। এ পরিস্থিতিতে কারখানাগুলো বন্ধের ঘোষণা দিয়ে গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানায়, কাজে না ফিরলে শ্রমিরা বেতন পাবে না। এরই মধ্যে শ্রমিক বিক্ষোভে উসকানি ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিভিন্ন কারখানার সহ¯্রাধিক কর্মীর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা করা হয়। গ্রেফতার করা হয় ১৯ শ্রমিক নেতা ও এক সাংবাদিককে। তিনটি কারখানার প্রায় সাড়ে তিনশ শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করে ফটকে নোটিস ঝুলিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর বিজিএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান গত রোববার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এবং ৩০ শ্রমিক সংগঠনের অনুরোধে বন্ধ কারখানাগুলো গতকাল সোমবার থেকে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল সোমবার সকালে আশুলিয়ার বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দেওয়া হলে শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণভাব কাজে যোগ দিতে দেখা যায়।
by
সর্বশেষ মন্তব্যসমূহ