ট্রাম্পের অভিবাসিদের ফেরত আদেশ আটকালো আদালত

বৈধ ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর পরও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার আওতায় কয়েকটি দেশের নাগরিকদের বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানোর যে প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ শুরু করেছে, আদালতের আদেশে তা আটকে গেছে। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়নের (এসিএলইউ) করা এক আবেদনে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন ফেডারেল আদালত শনিবার এই স্থগিতাদেশ দেয়।

ট্রাম্পের আদেশের পর বিভিন্ন বিমানবন্দরে শতাধিক যাত্রীকে আটক এবং বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভের মধ্যেই আদালতের এই আদেশ আসে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী মর্যাদা পাওয়া ব্যক্তি, বৈধ ভিসাধারী এবং যাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি আছে- তাদের আটক করে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করেন বিচারক অ্যান ডোনেলি। আদালতের ওই আদেশের খবর পৌঁছানোর পর বোস্টনের লোগান বিমানবন্দরে জড়ো হওয়া আন্দোলনকারীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। ট্রাম্পের আদেশের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিমানবন্দরের মতো লোগানেও বিক্ষোভ শুরু হয় বলে রয়টার্সের খবর।

আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন বলছে, ট্রাম্প তার নির্বাহী আদেশে সই করার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিমানবন্দর ও ট্রানজিট বিমানবন্দরে ১০০ থেকে ২০০ ভিসাধারী বা শরণার্থী মর্যাদাধারী যাত্রীকে আটকে দেওয়া হয়। আদালতের এই আদেশের ফলে তারা সুফল পাবেন। স্থগিতাদেশের পর বাদীপক্ষের আইনজীবী ইমিগ্রেন্টস রাইটস প্রোজেক্টের ডেপুটি লিগ্যাল ডাইরেক্টর লি গেলার্ন্ট আদালত প্রাঙ্গণে এলে উল্লসিত অনেকেই তাকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ট্রাম্পের আদেশের পর যাদের বিভিন্ন বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছে তাদের নামের তালিকা বিচারক সরকারের কাছে দেখতে চেয়েছেন। আমরা প্রত্যেকের সঙ্গে দেখা করব, কথা বলব; চেষ্টা করব দ্রুত তাদের আটকাদেশ থেকে মুক্ত করতে, অন্তত-তাদের যেন মৃত্যুর মুখে ফেরত পাঠানো না হয়, সে চেষ্টা করব,” বলেন গেলার্ন্ট।

বিবিসি জানিয়েছে, এই স্থগিতাদেশ বিষয়ে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছে আদালত। আগামী চার মাস যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে শুক্রবার একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন ট্রাম্প। সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি মুসলিম প্রধান ছয়টি দেশের নাগরিকদের জন্য তিন মাসের কড়াকড়ি আরোপ করা হয় ওই আদেশে। সেখানে বলা হয়, সিরিয়া ছাড়াও ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন থেকে আগামী ৯০ দিন কেউ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাবে না। ‘গ্রিন কার্ড’ধারীরাও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকছেন বলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়। পেন্টাগনে বসে ওই আদেশে সই করে ট্রাম্প বলেন, উগ্র ইসলামি সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে রাখতেই তার এই ব্যবস্থা।

বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের ওই আদেশের প্রভাব পড়তে শুরু করে শনিবার থেকেই। বৈধ ভিসা থাকার পরও মিশরের কায়রো বিমানবন্দরে পাঁচ ইরাকি ও এক ইয়েমেনি নাগরিককে আটকে দেওয়া হয়, যাদের নিউ ইয়র্কের ফ্লাইট ধরার কথা ছিল। প্রয়োজনীয় ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট থাকার পরও নিউ ইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে অবতরণের পর দুই ইরাকিকে আটক করা হলে আদালতে যায় আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন (এসিএলইউ)। ততক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিমানবন্দরের বাইরে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। এসিএলইউ সদস্য জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি ল সেন্টারের আইন বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড কোল এক টুইটে বলেন, “জনাব ট্রাম্প, আমরা আপনাকে আদালতে দেখে নেব।” মামলার হুমকি দেওয়া হয় কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন (সিএআইআর) এর পক্ষ থেকেও। ট্রাম্পকে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের সুযোগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এক যুক্ত বিবৃতিতে। আদালতের স্থগিতাদেশ পাওয়ার পর আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়নের এক টুইটে বলা হয়, এক সপ্তাহের মধ্যে ট্রাম্পের প্রথম হার হল আদালতে। গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করে রীতিমত শোরগোল বাঁধিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।

এই এক সপ্তাহে তিনি বহু আলোচিত ওবামাকেয়ার বাতিল করেছেন, ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন; মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং শরণার্থীদের আটকাতে জারি করেছেন কড়াকড়ি। গত শনিবার সকালে ওভাল অফিসে বসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যেসব পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন, তা অনেকদিন ধরেই বকেয়া ছিল। আর অভিবাসন নিয়ে তার আদেশ ‘চমৎকারভাবে’ কাজ করছে। বিমানবন্দরসহ সবখানেই তা কার্যকর হচ্ছে। আদালতের স্থগিতাদেশ আসার পর হোয়াইট হাউজের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, তারা এখনও আদালতের আদেশ হাতে পাননি। তবে যেকোনো আদেশ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করবে।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *