পাহাড়ি অঞ্চল থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করছে জঙ্গিরা

পার্বত্য অঞ্চলে যেসব উপজাতি গ্রুপগুলো চড়া দামে সমতল ভূমির জঙ্গি গোষ্ঠীর কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র বিক্রি করছে। নিরাপত্তা বাহিনীগুলো পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপের ব্যবহৃত ওই ধরনের বেশকিছু অস্ত্র উদ্ধার করেছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে আটক অনেক জেএমবি সদস্যই জিজ্ঞাসাবাদে পাহাড়ি অঞ্চল থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করার কথা জানিয়েছে। পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপগুলো অর্থের যোগান মেটাতে বছরে ৪০ কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি করছে। তার বাইরে তারা অস্ত্র বিক্রি করেও বছরে কয়েক কোটি টাকা তাদের অর্থ বিভাগে জমা দিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে পাহাড়ি উপজাতি সশস্ত্র গ্রুপগুলো উন্নত দেশ থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র গোলাবারুদ সংগ্রহ করছে।

বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলে সক্রিয় তিনটি গ্রুপই সামরিক বাহিনী তৈরি করেছে। তার মধ্যে জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সামরিক শাখায় তিন পার্বত্য জেলায় রযেছে ৭শ’র বেশি সদস্য। জেএসএস সংস্কারপন্থীদের রয়েছে ৩ থেকে সাড়ে ৩শ’ সদস্য। আর ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) আছে ৯শ’ সামরিক সদস্য। তাদেওর হাতে রয়েছে এম কে-১১, জার্মানির তৈরি এইচ কে-৩৩, রাশিয়ার জি-৩, একে-৪৭, একে-২২, এম-১৬ রাইফেল, নাইন এমএম পিস্তল, চায়নিজ সাব মেশিনগান, এসবিবিএল বন্দুক। ওসবই বিদেশী অত্যাধুনিক অস্ত্র। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ইতিমধ্যে ওই ধরনের বেশ কিছু অস্ত্র ধরা পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেছে। সেজন্য খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের দুর্গম পাহাড় আর গভীর অরণ্যে চলছে নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়মিত অভিযান। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পার্বত্যাঞ্চলের উপজাতি  সশস্ত্র গ্রুপগুলোর হাত ঘুরে অত্যাধুনিক বিদেশী অস্ত্র দেশে সক্রিয় বিভিন্ন জঙ্গীদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আর তা ব্যবহার হচ্ছে দেশবিরোধী সন্ত্রাসী কাজে। এমন পরিস্থিতিতে তিন পার্বত্য জেলায় পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মূলত দুর্গম এলাকার সুযোগ নিয়েই পাহাড়ে সক্রিয় সন্ত্রাসীরা অস্ত্র কেনাবেচার রুট হিসেবে পার্বত্য জেলাগুলোকে ব্যবহার করছে। পাশাপাশি জঙ্গিরাও ওই অঞ্চল থেকে অস্ত্র সংগ্রহকে নিরাপদ মনে করছে। সেজন্য জঙ্গিরা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর সাথে সখ্য গড়ে তুলছে। বিষয়টিকে রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সূত্র জানায়, তিন পার্বত্য জেলায় অস্ত্র কেনাবেচায় সম্পৃক্ত থাকা ১৫ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের নাম রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (এআরএসও), ন্যাশনাল ইউনাইটেড পার্টি অব আরাকান (এনইউএ), আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি), পিপলস পার্টি অব আরাকান (পিপিএ), আরাকান আর্মি (এএ), আরাকান রোহিঙ্গা ইসলামী ফ্রন্ট (এআরআইএফ), ডেমোক্রেটিক পার্টি অব আরাকান (ডিপিএ)। ওসব বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনদের জন্য সতর্কতা অবলম্বনের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে সীমান্তঘেঁষা বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে বেশকিছু নতুন চেকপোস্ট। প্রয়োজন অনুযায়ী আরো চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে। বান্দরবানের থানচি ও নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী এলাকা, রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার ছোটহরিণা, বড়হরিণা, বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক, জুরাছড়ির আন্দারমানিক, ফকিরাছড়ি, বিলাইছড়ি, খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার নারাইছড়ি, পানছড়ির দুদকছড়ি, কেদারাছড়া, মাটিরাঙা উপজেলার আচালং, রামগড় উপজেলার বাগানবাজার, বড়বিল, রামগড় বাজারসহ আরো কয়েকটি এলাকা। ওসব এলাকায় যেসব রুট ব্যবহার হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম কারণ হিসেবে অরক্ষিত সীমান্তকে দায়ী করছে পুলিশ। কারণ ৪শ’ ১১ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো সহজেই যাতায়াত করতে পারছে। তাছাড়া পাহাড়ি বিচ্ছন্নতাবাদীরাও অভিযান চলাকালে সহজেই পালিয়ে যেতে পারছে। কাঁটাতারের বেড়া তৈরি হলে অস্ত্র চালানের বিষয়টি অনেক কমে যাবে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সাথে ২৮১ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তের ইতিমধ্যে ১৩০ কিলোমিটার সুরক্ষিত করা হয়েছে আর মিয়ানমারের সাথে থাকা ১৯৮ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে ৮৫ কিলোমিটার সুরক্ষিত করা হয়েছে। সীমান্ত সুরক্ষিত করার অংশ হিসেবে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হচ্ছে চেকপোস্ট। চেকপোস্টগুলো হলে অস্ত্রের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে জানিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে পাহাড়ি এলাকায় অস্ত্রের ব্যাপকতা সম্পর্কে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজুরী চৌধুরী জানান, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত ঘিরে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সক্রিয় রয়েছে। তাদের যোগসূত্রে পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে অস্ত্র আসতে পারে। এখানেও কিছু লোক সরকারবিরোধী কাজে যুক্ত রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার পদক্ষেপও নিচ্ছে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মজিদ আলী জানান, আগে পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে অনেক বেশি অস্ত্র আসতো। এখন সেনাবাহিনী ও পুলিশের অভিযানে অনেক কমেছে। আর পার্বত্য জেলায় উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলোও দেশী অস্ত্র না। বাইরে থেকে যেওএসব অস্ত্র আসছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ বিষয়ে গোয়েন্দা রিপোর্ট রয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও অস্ত্রের কানেকশন নিয়ে নজরদারি হচ্ছে। একই সাথে পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের সাথে জঙ্গিদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *