ট্রাম্প বিরোধিতায় বরখাস্ত অ্যাটর্নি জেনারেল

অভিবাসন কমাতে জারি করা নিষেধাজ্ঞার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেলকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত সোমবার রাতে স্যালি ইয়েটসকে বরখাস্তের আদেশ আসে, যিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন আগের প্রেসিডেন্ট ওবামার সময়ে। যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী কর্মসূচি চার মাসের জন্য স্থগিত এবং সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে গত শুক্রবার নির্বাহী আদেশ জারি করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর প্রতিক্রিয়ায় দেশে-বিদেশে শুরু হয় বিক্ষোভ। এরই মধ্যে ট্রাম্পের ওই আদেশ কার্যকর করতে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসকে নিষেধ করেন ফেডারেল সরকারের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা ইয়েটস। তিনি বলেন, ট্রাম্পের আদেশ আইনসম্মত কি না- সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। তার ওই বক্তব্যের পর টুইটারে ট্রাম্পের তীব্র প্রতিক্রিয়া আসে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এখনও ওবামার অ্যাটর্নি জেনারেল আছে। ‘নিখাঁদ রাজনৈতিক কারণে’ তার নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের মনোনয়নে দেরি করিয়ে দিতে ডেমোক্রেটিক পার্টি কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেন ট্রাম্প। এরপর হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইয়েটস বিচার বিভাগের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন। ইয়েটসের জায়গায় ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভার্জিনিয়ার ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের অ্যাটর্নি ডানা বোয়েন্তেকে। নিউ ইয়র্কের ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০০৪ সালে এনবিসি টেলিভিশনে ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ নামে একটি রিয়েলিটি শো শুরু করেন, যেখানে প্রতিযোগীদের পুরস্কার ছিল ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপকের চাকরি। ওই সময় ট্রাম্পের কণ্ঠের ‘ইউ আর ফায়ারড’ ডায়ালগটি বেশ আলোচিত হয়ে ওঠে। গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে একের পর এক নির্বাহী আদেশে বিশ্বজুড়ে তুলকালাম বাধিয়ে দেওয়ার পর এই প্রথম কাউকে ‘ফায়ার’ করলেন ট্রাম্প।

বিবিসি লিখেছে, ট্রাম্পের সমালোচকরা এই ঘটনাকে বর্ণনা করছেন ‘মানডে নাইট ম্যাসাকার’ হিসেবে। ১৯৭৩ সালের ২০ অক্টোবর ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে টালমাটাল যুক্তরাষ্ট্রে তখনকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তার অ্যাটর্নি জেনারেল এলিয়ট রিচার্ডসন ইনডিপেনডেন্ট স্পেশাল প্রসিকিউটর আর্চিবল্ড কক্সকে বরখাস্তের নির্দেশ দেন। তাতে এলিয়ট রিচার্ডসন নিজেই পদত্যাগ করে বসেন। ওই ঘটনা পরিচিতি পায় ‘সেটারডে নাইট ম্যাসাকার’ হিসেবে।    ওবামার শেষ সময়ের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন লরেটা লিঞ্চ। ট্রাম্পের অভিষেকের দিনে তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিলে তার ডেপুটি ইয়েটসের কাঁধে দায়িত্ব চাপে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরপরই ট্রাম্প নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে জেফ সেশনসকে মনোনীত করেন। কিন্তু সিনেট তাকে এখনও অনুমোদন না দেওয়ায় ইয়েটসকেই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে বলেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের আদেশ বিষয়ে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের কর্মীদের কাছে লেখা ইয়েটসের একটি চিঠি গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

সেখানে তিনি বলেন, যতক্ষণ আমি দায়িত্বে আছি, ততক্ষণ প্রেসিডেন্টের ওই নির্বাহী আদেশের সমর্থনে বিচার বিভাগ আদালতে লড়বে না।

বিবিসি জানিয়েছে, ইয়েটসের স্থলাভিষিক্ত বোয়েন্তেকেও ২০১৫ সালে বারাক ওবামাই নিয়োগ দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে যখন বোয়েন্তের নিয়োগ অনুমোদন পায়, ট্রাম্প তখন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টায়।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা গত সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, নাগরিকরা তাদের সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী জড়ো হচ্ছে, সংগঠিত হচ্ছে এবং আওয়াজ তুলছে তাদেরই নির্বাচিতদের বিরুদ্ধে- আমেরিকান মূল্যবোধ যখন বিপদে পড়ে, তখন এমনটাই আমরা প্রত্যাশা করি। রীতি অনুযায়ী, সাবেক প্রেসিডেন্টরা সাধারণত পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বা রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন। যদিও বিদায়ের আগে ওবামা বলেছিলেন, ট্রাম্প আমেরিকান মূল্যবোধকে বিপদে ফেলছেন মনে হলে দায়িত্ব ছাড়ার পরও কথা বলবেন তিনি।

এদিকে ট্রাম্পের আদেশের সঙ্গে ‘ভিন্নমত’ প্রকাশ করে শতাধিক কূটনীতিক একটি চিঠি পাঠাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বিবিসির দেখা চিঠির খসড়াতে কূটনীতিকরা বলেছেন, অভিবাসী আটকাতে ট্রাম্পের আদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে মোটেও নিরাপদ রাখবে না। এই আদেশ ‘আমেরিকানসুলভ’ নয় এবং মুসলিম বিশ্বের কাছে ভুল বার্তা পাঠাবে। ট্রাম্পের ওই আদেশের পর সমালোচনা চলছে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র দেশগুলোতেও। যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের সফর ঠেকাতে দশ লাখেরও বেশি মানুষ একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। আদেশের পরদিনই নিউ ইয়র্কের এক ফেডারেল বিচারক অভিবাসী বিষয়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের একটি অংশের বিষয়ে স্থগিতাদেশ দেন।  আদেশে বলা হয়, নির্বাহী আদেশ জারি হওয়ার পর মুসলিকপ্রধান সাতটি দেশের যে ব্যক্তিরা বৈধ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরে এসে উপস্থিত হয়েছেন, কর্তৃপক্ষ তাদের ফেরত পাঠাতে পারবে না। এক যৌথ বিবৃতিতে ১৬ জন ডেমোক্রেট অ্যাটর্নি ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশকে ‘অসাংবিধানিক, অ-আমেরিকান ও বেআইনি’ আখ্যায়িত করে এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *