নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন অসম্ভব

নারীর জন্য যে নতুন উন্নয়ন মডেল বিষয়ে আলোচনা চলছে, সেখানে চাই নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর মালিকানা, মানসম্মত কাজের পরিবেশ এবং মজুরি শান্তি ও ন্যায়বিচার।

নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া দেশের প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়, এ উপলব্ধি থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ জারি করে। ওই আদেশে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলের সব কমিটিতে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বড় বড় রাজনৈতিক দল তাদের কমিটিতে তা এখনও  নিশ্চিত করতে পারেনি। তাই নারীর ক্ষমতায়ন করতে হলে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে নারীদের অধিক মনোনয়ন দেওয়া- বললেন জনউদ্যোগ, খুলনা, ও হিন্দু সম্পত্তিতে নারীর অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির মানববন্ধনে নাগরিক নেতৃবৃন্দ।

আজ শনিবার বেলা ১১টায় নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে জনউদ্যোগ, খুলনা, ও  হিন্দু সম্পত্তিতে নারীর অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারীদের অধিক মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে সংরক্ষিত আসনে যারা অধিষ্ঠিত, তাদের অবস্থা অনেকটা যেন ‘ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দারের মতো।’ কিন্তু এটি মনে রাখা দরকার, নারীর অধিকার মানবাধিকার থেকে ভিন্ন কিছু নয়। মানবাধিকারের সব বিষয়ই নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বাংলাদেশের নারীদের শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মডেল হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে দেশে যৌতুক, বাল্যবিয়ে, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে অনেক ভালো আইন থাকলেও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ আইনগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে সত্যিকার অর্থে নারীর ক্ষমতায়ন কখনো সম্ভব নয়। পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে পুরুষের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি এবং পরিবার থেকেই নারীর সমঅধিকার ও সমমর্যাদা চর্চার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। তৃণমূলে নারীর ক্ষমতায়নের চাকা গতিশীল করতে হবে।

বক্তারা বলেন, অন্যদিকে জাতীয় সংসদে সংরক্ষণ পদ্ধতিতে সরাসরি নির্বাচন এবং প্রত্যেক সাংসদের জন্য সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকা না থাকায় রাজনৈতিক চর্চা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নারী নেতৃত্ব। সংরক্ষিত নারী আসনের নারীরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং বিষয়টিও বহুলভাবে সমাজে আলোচনায় এসেছে। চাকরির ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের আনুপাতিক হার বাড়ছে। এক সমীক্ষায় প্রকাশ, প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ২২ লাখ কর্মক্ষম মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হচ্ছে, যার মধ্যে নারীর আনুপাতিক হার আগের চেয়ে কিছুটা সন্তোষজনক। নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন তখনই পুরোপুরি সম্ভব হবে, যখন কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ থাকবে। সেটা ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ পর্যায়ে হতে পারে। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন মোটামুটি হলেও এর পূর্ণতা লাভের ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা এখনো বিদ্যমান। এই প্রতিবন্ধকতাগুলো বেশিরভাগই সামাজিক ও রাজনৈতিক। এর নিরসন না করে তৃণমূল পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ন আশানুরূপ করা সম্ভব হবে বলে দাবি করেন নাগরিক নেতৃবৃন্দ।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন হিন্দু সম্পত্তিতে নারীর অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক সুতপা বেদজ্ঞ। সভা পরিচালনা করেন জনউদ্যোগ,খুলনার সদস্য সচিব মহেন্দ্র নাথ সেন। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কৃষকলীগের কেন্দ্রীয়নেতা শ্যামল সিংহ রায়, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড: বাবুল হাওলাদার জেলা কমিটির নেতা মিজানুর রহমান বাবু,খুলনা পোল্ট্রি ফিস ফিড শিল্প মালিক সমিতির মহাসচিব এস এম সোহরাব হোসেন, হিরন্ময় মন্ডল, দীপক কুমার দে, সোনালী দিন প্রতিবন্ধী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইসরাত আরা হিরা, সাব্বির খান, নান্দিক একাডেমীর পরিচালক জেসমিন জামান , গ্লোবাল , খুলনার শাহ মামুনুর রহমান তুহিন, আমরা খুলনাবাসীর ডা: মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু, জেলা হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নাসির খান, প্রশিকার বাকের আহমেদ,আমরা খুলনাবাসীর ছায়াবৃক্ষের নির্বাহী পরিচালক মাহাবুবুল হক বাদশা, সেফের দীপক কুমার দে, খাদিজা কবীর তুলি, স্বপ্নম সাবা, রীনা চৌধুরী, শিরিন চৌধুরী, ছাত্রনেতা জয়ন্ত মুখ্যার্জী প্রমুখ।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *