নান্দনিকতার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়াতে শিল্পীদের কাজ করতে হবে: খুবি উপাচার্য

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের চারদিনব্যাপী বার্ষিক শিল্পকলা প্রদর্শনী আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় ফানুস উড়ানোর মাধ্যমে শেষ হয়েছে।

এর আগে সকাল সাড়ে দশটায় এ প্রদর্শনীতে প্রদর্শীত শিল্পকর্মের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. আহমেদ আহসানুজ্জামানের সভাপতিত্বে  অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।

তিনি বলেন অনেক আগেই খুলনায় চারুকলার বিকাশ ও উৎকর্ষ অর্জনের কথা কেননা, এখানেই শতবছরেরও আগে চারুকলা বিদ্যাচর্চা শুরু হয়েছিলো শশিভুষণ পালের হাত ধরে। কিন্ত সে অর্থে তা বিকশিত না হলেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা ইনস্টিউটের যাত্রা শুরু হওয়ার পর নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। চারুকলা খোলার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিকে পরিবর্তন এসেছে। তবে আমাদের সমাজে এখনও অনেকে চারুকলাকে নান্দনিকঅর্থে গ্রহণ করতে পারে না। তারাই এর বিরোধিতা করে। তারাই রাতের আঁধারে শিল্পকর্ম নষ্টের চক্রান্ত করে। তারাই সমাজকে এগিয়ে যেতে দিতে চায় না। তিনি বলেন চারুকলা সৃজনশীল ও নন্দন চর্চার বিষয়। মানুষকে, সমাজকে নান্দনিকতা দিয়ে পরিবর্তন করে। যে সমাজে নান্দনিকতার চর্চা হয়, যে সমাজ শিল্পীত, সে সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ কম। শিল্পীদের প্রতিবাদের ভাষা ভিন্ন, তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অবিচারের বিরুদ্ধে শিল্পীত প্রতিবাদ করে থাকে। তাই শিল্পীত সমাজ গঠনে চারুকলার শিল্পীদের এগিয়ে আসতে হবে, চারুকলার সাথে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। নান্দনিকতার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়াতে শিল্পীদের কাজ করতে হবে।

তিনি এবারের বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজনের প্রশংসা করে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আগামীতে এ প্রদর্শনী আরও সাড়া জাগাতে সক্ষম হবে। এর আগে তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির পুরস্কার বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. সাবিহা হক এবং ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. ফিরোজ আহমদ, তাঁরা উভয়ই চারুকলা ইনিস্টিটিউটের নির্বাহী কমিটির সদস্য। এছাড়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিনের প্রধান ড. নিহার রঞ্জন সিংহ। অনুষ্ঠানে চারুকলা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথিদ্বয়কে শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে তিনিটি পেইন্টিং উপহার প্রদান করেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক। এছাড়া অনুষ্ঠানে বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ক্যাটালগের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান অতিথি উপাচার্য। এদিকে সন্ধ্যায় ফানুস উড়িয়ে এই প্রদর্শনীর সমাপ্তি করেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. আহমেদ আহসানুজ্জামান। এ সময় চারুকলা ইনস্টিটিউটের তিনটি ডিসিপ্লিন প্রধান এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, এবার এ প্রদর্শনীতে দুইশতাধিক শিল্পকর্ম প্রদর্শীত হয়। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম হিসেবে শশিভুষণ পাল গ্রান্ড এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তরা হলেন ড্রইং এন্ড পেইন্টিং ডিসিপ্লিনের এমএফএ (মাস্টার্স অব ফাইন আর্টস) ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী পীযুষ বিশ্বাস, প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিনের এমএফএ ১৬ ব্যাচের মোঃ কাওসার সিকদার, ভাস্কর্য ডিসিপ্লিনের এমএফএ ১৬ ব্যাচের জায়েদ আল মাহফুজ।

এছাড়া অন্যান্য ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন, মিডিয়া বেস্ট এ্যাওয়াডর্: ড্রইং এন্ড পেইন্টিং ডিসিপ্লিনের এমএফএ ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী জয় কুমার ভৌমিক, বিএফএ (ব্যাচেলর অব ফাইন আর্টস) ১২ এবং ১৩ ব্যাচের অলিক কুমার রপ্তান, ১৪ ব্যাচের রাজ সিংহ, ১৫ ব্যাচের হিরন্ময় মন্ডল, ১৬ ব্যাচের অমিয়বল অমি, ১৭ ব্যাচের আয়শা সিদ্দিকা, প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিনের এমএফএ ১৬ ব্যাচের কেয়া চক্রবর্তী, বিএফএ ১২ এবং ১৩ ব্যাচের মোঃ তৌহিদুর রহমান, ১৪ ব্যাচের পিন্টু ঠিকাদার, ১৫ ব্যাচের মোঃ শফিকুল আলম, ১৬ ব্যাচের তাবাসসুম ইমা, ১৭ ব্যাচের সুমাইতা আফরিন, ভাস্কর্য ডিসিপ্লিনের এমএফএ ১৬ ব্যাচের গৌতম চৌধুরী, বিএফএ ১২ এবং ১৩ ব্যাচের মোঃ রবিউল ইসলাম, ১৪ ব্যাচের রূপক কুমার সাহা, ১৫ ব্যাচের নিশাত আরা সীমা, ১৬ ব্যাচের ঐন্দ্রিলা হাজরা, ১৭ ব্যাচের মধুরিমা সাহা। ক্লাস বেস্ট এ্যাওয়ার্ড : ড্রইং এন্ড পেইন্টিং ডিসিপ্লিনের এমএফএ, ১৬ ব্যাচের সজল মিশ্র, বিএফ এ ১২ এবং ১৩ ব্যাচের ববিতা আখতার, ১৪ ব্যাচের দিতি শীল চৈতি, ১৫ ব্যাচের অলোকেশ মন্ডল, ১৬ ব্যাচের সুভাশিষ বৈরাগী, ১৭ ব্যাচের পুষ্পেন্দু রাজ, প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিন, এমএফএ, ১৬ ব্যাচের শাহরিন শাবনাম, বিএফএ, ১২ এবং ১৩ ব্যাচের জেবা ফারিয়া মিতি, ১৪ ব্যাচের নওরিন শাহরিন শান্তা, ১৫ ব্যাচের মেহেদী আহমেদ সৈকত, ১৬ ব্যাচের তন্দ্রা বিশ্বাস, ১৭ ব্যাচের অমরিতা রায়। ভাস্কর্য ডিসিপ্লিনের এমএফএ, ১৬ ব্যাচের শ্রবন্তি চৌধুরী, বিএফএ, ১২ এবং ১৩ ব্যাচের বিজন হালদার, ১৪ ব্যাচের দেবাংশু কুমার গাইন, ১৫ ব্যাচের মৌমিতা রায়, ১৬ ব্যাচের ফারিনা সুলতানা তমা, ১৭ ব্যাচের তিয়ান্না আশিক প্রাপ্তি। পরে উপাচার্য কবি নজরুল ইসলাম কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি পরিদর্শন করেন।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *