খুবিতে ইকোটক্সিকোলজি শীর্ষক দুদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) দুদিনব্যাপী ‘ইকোটক্সিকোলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে এ সম্মেলন উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় খুবির উপাচার্য ও  সম্মেলনের উপদেষ্টা কমিটির চিফ প্যাট্রন প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন ইকোটক্সিকোলজি ও এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সসহ আনুসঙ্গিক বিষয়ে যৌথ গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্ভাবনা ও দিক-নির্দেশনা প্রদানের জন্য গবেষক ও বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইকোটক্সিকোলজির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে প্রকৃতি ও পরিবেশকে বাঁচাতে গবেষণা জোরদার প্রয়োজন। বাংলাদেশ ও ভারতের ভৌগলিক ও পরিবেশগত প্রকৃতি একই অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় তা প্রায় একই রকম। ফলে এখানে নানা বিষয়ে দ্বি-পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সুস্থ পরিবেশের ওপরই সুস্থ-সুখী জীবন নির্ভরশীল। আর এর জন্য প্রয়োজন প্রকৃতিকে দূষণমুক্ত রাখা, স্বাভাবিক অবস্থা নিশ্চিত করা। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষতির মাত্রা বেড়েই চলেছে। জীবনধারণের প্রয়োজনে, মানোন্নয়নে, বিলাস-বসনে শিল্প, কৃষিসহ অবকাঠামোর বিকাশ ঘটাতে গিয়ে নানা অবস্থা ও মাধ্যমে ক্ষতিকর অজৈবজাত উপকরণ ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে মাটি, পানি ও পরিবেশ দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। এমনকি বাতাসও আজ দূষিত হচ্ছে। এর প্রধান ক্ষতির শিকার মানবজাতি, প্রাণি ও উদ্ভিদ। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ক্ষতির মাত্রা আরো বেড়ে যাবে; তখন বাস্তুতন্ত্র আরো বিষাক্ত হয়ে বাস উপযোগিতা হারাবে, জীববৈচিত্র্য টিকে থাকার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে।

উদ্বোধনের পর উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন কি-নোট স্পিকার হিসেবে ‘ইজ দি সুন্দরবনস অব বাংলাদেশ ইন এ স্টেট অব পলিউশন’ শীর্ষক নিবন্ধ পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপন করেন।

মূল নিবন্ধে তিনি সুন্দরবনের মাটি, পানি, পরিবেশ, উদ্ভিদ ও প্রাণিসহ জীববৈচিত্র্যের নানা দিক তুলে ধরে বলেন, সুন্দরবনের উপর নানামুখী চাপ বাড়ছে। সুন্দরবনের স্বাভাবিক বিকাশের সুযোগ অবারিত রাখা প্রয়োজন। তা না হলে এর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ অনেকটাই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। সুন্দরবনের মাটি ও পানির উপাদানসমূহের স্ট্যান্ডার্ড নিরূপন এখন সময়ের দাবি। কারণ, সুন্দরবন নিয়ে নেতিবাচক, ইতিবাচক অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়ে থাকে। একেকজন একেকরকম তথ্য-উপাত্ত দিয়ে মন্তব্য করেন। কিন্তু সুন্দরবনের মাটির স্ট্রাকচার, পানিতে উপস্থিত উপাদান মাত্রার স্টান্ডার্ড কি হবে তা এখনও নিরূপিত হয়নি। দেশ-বিদেশের অনেক নদী ও বনের মাটি, পানির স্টান্ডার্ড রয়েছে। কিন্তু সুন্দরবন ম্যানগ্রোভের তা নেই। এটা নির্ধারণ জরুরি। তিনি তথ্য-উপাত্ত দিয়ে গত ২০ বছরের সুন্দরবনের লবণাক্ততার তারতম্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, সুন্দরবনের করমজল ও সুতারখালী জনপদ সন্নিহিত এলাকার পানিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতির তুলনায় দক্ষিণে সুন্দরবনের সৈকত সন্নিহিত এলাকার পানিতে এর পরিমাণ বেশি। এছাড়া সাম্প্রতিককালে সুন্দরবনের পানি ও মাটিতে প্লাস্টিক পার্টিকেলের উপস্থিতি উদ্ভিদ ও প্রাণির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এসব বিষয়েও গবেষণা প্রয়োজন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। সভাপতির বক্তব্য রাখেন সম্মেলন আয়োজক কমিটির চেয়ারপার্সন আইইএন্ডইএস’র সভাপতি ড. শর্মিলা পাল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আহ্বায়ক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. সরদার শফিকুল ইসলাম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ, ভারত ও ইতালির জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।

উল্লেখ্য, দুদিনব্যাপী এ সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, ইতালির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউশনের ১৩০ জন প্রতিনিধি সশরীরে অংশগ্রহণ করছেন। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেও ভার্চুয়ালি এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন গবেষকরা। সম্মেলনে ১০টি সেশনে শতাধিক নিবন্ধ উপস্থাপন করা হবে।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *