ভারতে বাংলাদেশি নারী টুম্পা হত্যা মামলার মূল আসামিসহ গ্রেফতার ৩

ভারতে বাংলাদেশি নারী টুম্পা হত্যাকান্ডের মূল আসামি ও পাচারকারী চক্রের অপর দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ৬।

গত শুক্রবার তাদের খুলনা ও যশোরের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার আসামিরা হচ্ছে,  নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার হত্যাকারী আলী হোসেন (২০) এবং পাচারকারীচক্রের সদস্য খুলনা সদর থানা এলাকার মো. আল আমিন (১৯) ও কুলসুম বেগম (৪৫)।

র‌্যাব ৬ এর মিডিয়া অফিসার এএসপি তারিক আনাম বান্না জানান, ভারতে বসবাসরত যশোরের অভয়নগর উপজেলার নবাব ও পিরোজপুর ভান্ডরিয়ার বৃষ্টি পরস্পর স্বামী স্ত্রী। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভারতে মানবপাচারকারী চক্রের মূলহোতা। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তাদের চক্রের সদস্যদের সাহায্যে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভারতে পাচার ও বিক্রি করে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজে বাধ্য করে। এই চক্রের সক্রিয় সদস্য বৃষ্টির মা কুলসুম ও ভাই আল আমিন খুলনা মহানগরীর সদর থানা এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করে মানবপাচারে সহযোগিতা করে আসছে।

ভিকটিম টুম্পা তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকার ডেমরা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। আসামিরা আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে, টিকটক সেলিব্রেটি বানিয়ে দেওয়া ও বিদেশে চাকরি দেওয়ার নাম করে ভিকটিম টুম্পাকে পাচারকারী বৃষ্টি ও নবাবের পরিকল্পনায় লেংড়া রমজান এবং জুয়েল বিশ্বাসের সহযোগিতায় ঢাকা থেকে খুলনায় নিয়ে আসে। এরপর বৃষ্টির মা কুলসুমের বাসায় ভিকটিমকে তিন দিন আটকে রাখা হয়। এরপর বৃষ্টি ও নবাবের নির্দেশে কুলসুম ও আল আমিন ভিকটিম টুম্পাকে মানবপাচার চক্রের সাহায্যে যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে। ভারতে একটি বাসায় আটকে রেখে ভিকটিমকে ভারতের এনআইডি কার্ড ও আধার কার্ড তৈরি করে দিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করে। এরপর বৃষ্টি ও নবাবের নির্দেশে আলী হোসেনের জিম্মায় অনৈতিক কাজ করার জন্য ভিকটিমকে দুই মাস আটকে রাখা হয়।  এ সময় জোর করে টুম্পার সঙ্গে আলী হোসেনের টিকটক ভিডিও বানানো হতো। এতে অসম্মতি জানালে তারা টুম্পাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। একপর্যায়ে তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সে দেশে আসার চেষ্টা করে। বিষয়টি নবাব ও বৃষ্টিকে পাচারকারী চক্রের সদস্য আলী হোসেন জানায়। এরপর বৃষ্টি ও নবাব  আলী হোসেনকে টুম্পাকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়।

গত ২৬ জানুয়ারি রাতে গুজরাট পুলিশ ফোন করে ভিকটিম টুম্পার বাবাকে জানায় যে, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে অন্য একটি ফোনের মাধ্যমে ভিকটিমের বাবাকে জানানো হয় আসামি আলী হোসেন তার মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে ভিকটিমের বাবা র‌্যাব বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর থেকেই র‌্যাব আসামিদের গ্রেফতাররে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে, এরই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার র‌্যাব-৬ এর স্পেশাল কোম্পানি ও যশোর ক্যাম্পের একটি যৌথ আভিযানিক দল যশোর ও খুলনা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকারী  আলী হোসেন, এবং পাচারকারীচক্রের সদস্য মো. আল আমিন ও  কুলসুম বেগমকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা ওই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ডিএমপি ঢাকার ডেমরা থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *