মরুভূমির ফুল ইসরায়েল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর ইউরোপের ইহুদীগণ

বাংলাদেশ নিয়ে পশ্চিমা ষড়যন্ত্র সাথে ইসরায়েল

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন্ ডের লেইন ২৬ এপ্রিল, ২০২৩, ইসরায়েলের তথাকথিত স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এক বার্তায় বলেছেন, “ ইসরায়েল মরুভূমিতে ফুল ফুটিয়েছে’।”

তো একদা ইউরোপ থেকে আগত এই ইহুদীদের উপর একটু অনুসন্ধান করা যাকঃ

প্রাচীনকাল (কম-বেশী ২০০০ খৃঃ পূঃ ) থেকে বাস্তুচ্যুত ইহুদী জাতি দাস (ব্যাবিলন কর্তৃক) এবং ভবঘুরে হিসেবে ঘুরতে থাকে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, মিশর, গ্রিস হয়ে খৃষ্টিয় তৃতীয়-চতুর্থ শতাব্দিতে হাজির হয় ইউরোপে, প্রথমে হাঙ্গেরিতে পরে সমগ্র ইউরোপে।

মধ্যযুগে আবার বিভিন্ন দেশ (ইউরোপের) থেকে বিতাড়ন শুরু হলে আবার তারা ভাসতে থাকে এবং পূর্বইউরোপে ও রাশিয়ায় বিশেষ করে রাশিয়ার ইউক্রেনে হাজির হয়। এ সময় সমগ্র ইউরোপে ইহুদীদের সংখ্যা ছিলো প্রায় ৯০ লাখ থেকে এক কোটি।

এই হাজার বছরের পরিক্রমায় ইহুদীরা ইউরোপে নাগরিক অধিকার তো দূরঅস্ত মানুষ হিসেবে মানবিক ব্যবহারটুকুও পায় নি, তার বড় প্রমাণ ইউরোপীয় তথা বিশ্বসাহিত্যে এর নজির ভুরি ভুরি। এই মানবিক বিপর্যয়ের চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখতে পাই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জার্মানী ও তার ইউরোপীয় জোট সঙ্গিগণ কর্তৃক কয়েক মিলিয়ন ইহুদীকে গুলি করে, গ্যাস চেম্বারে পুড়িয়ে হত্যা! আর এই জার্মানীর পড়সি রাশিয়া-ইউক্রেনে ইহুদীরা কেমন ছিল আমরা সেটা জানার চেষ্টা করবো, আর সে অনুসন্ধান শুরু হবে রুশ সাহিত্য থেকে, কারণ ইউরোপের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইহুদী বাস করতো রাশিয়া তথা ইইক্রেনেই।

বিশ্বসাহিত্যের একজন দিকপাল নিকোলাই ভাসিলিয়েভিচ গোগল জন্মেছেন রাশিয়ার ইউক্রেনে, যে রাশিয়া বিশেষ করে ইউক্রেন ইউরোপের ইহুদীদের একটি প্রধান কেন্দ্র। গোগলের লেখায় সামাজিক প্রেক্ষাপটে বারে বারে এসেছে ইহুদী প্রসঙ্গ, সামাজিক চরিত্র হিসেবে তাদের আচার-আচরণ কর্মকান্ড, তাদের সাথে স্থানীয়দের আচার-ব্যবহার।

গোগল সম্পর্কে কিছু সমালোচনাঃ “পৃথিবীতে বহুকাল এমন আর কোন লেখক ছিলেন না যিনি তাঁর নিজের জাতির পক্ষে এত গুরুত্বপূর্ণ, যেমন গোগল ছিলেন রাশিয়ার পক্ষে।…… তিনি আমাদের বলেন আমরা কি প্রকৃতির, কোথায় আমাদের ঘাটতি, কিসের জন্য আমাদের চেষ্টা করা উচিৎ, কিসে বিতৃষ্ণা বোধ করতে হয়, কি ভালবাসতে হয়। তাঁর সমগ্র জীবন ছিল অজ্ঞতা ও স্থ’লতার বিরুদ্ধে উদ্দিপ্ত সংগ্রাম। … সবই ছিল প্রবল, অপরিবর্তনীয় উদ্দেশ্যের দ্বারা- নিজের জন্মভূমির হিতার্থে সেবার চিন্তায় অনুপ্রাণিত।” – নিকোলাই চের্নিশেভস্কি।

উনবিংশ শতাব্দির প্রথমার্ধে ধ্রুপদী সাহিত্যের লেখকদের মধ্যে নিকোলাই ভাসিলিয়েভিচ গোগল (১৮০৯-১৮৫২০)’র রচনা লেখকের জীবদ্দশাতেই বিভিন্ন বিদেশী ভাষায় ব্যাপক অনুদিত হয়। গোগলকে খাটি জাতিয়, মৌলিক এবং বিদেশীদের পক্ষে সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় কবি আখ্যা দিয়ে তাঁর সমসাময়িক মহাপ্রতিভাধর রুশ সমালোচক ভিস্সারিওন বেলিন্স্কি বলেন ঃ “ গোগল লেখন না, তিনি আঁকেন, তাঁর রূপমূর্তিগুলির নিশ্বাসপ্রশ্বাসে আছে বাস্তবতার সজীব রং, সেগুলিকে দেখা যায়, শোনা যায়।”

‘গোগলীয় ধারা’ নামে এক নতুন ধারার প্রবর্তক গোগলের রচনার মধ্যে যুগপৎ স্থান পেয়েছে রুশ বাস্তবতার দুই যুগ- শতাব্দির সূচনাকালীন বাস্তবতা- পুশকিনের (পুশকিন আর গোগল ছিলেন হরিহর আত্মা বন্ধু) জীবননিষ্ঠ বাস্তববাদ এবং শতাব্দির সমাপ্তিকালীন-দস্তয়েভ্স্কির মর্মান্তিক দ্বৈধ মতবাদ।

“ আমরা সবাই বেরিয়েছি গোগলের ‘ওভারকোট’ থেকে”- গোগলের ‘সেন্টপিটার্সবুর্গের উপাখ্যান’ সম্পর্কে এই বিখ্যাত মন্তব্যের দ্বারা দস্তয়েভ্স্কি নিজেকে গোগলের অনুগামী ও ‘শিষ্য’ বলে স্বীকার করেছেন।

আর গোগল স্বয়ং নিজের সম্পর্কে বলেছেন, ‘ আমার চিন্তা, আমার নাম, আমার রচনা রাশিয়ার অধিকারভুক্ত।’ – নিকোলাই ভাসিলিয়েভিচ গোগল।

গোগলের রচনা ‘ভয়ঙ্কর প্রতিহিংসা’ থেকে উদ্ধৃতিঃ সীমান্তবর্তী সড়কের এক সরাইখানায় পোলরা (পোলিশরা তখন ক্যাথলিক ধর্ম গ্রহণ করেছে) জড় হয়েছে, আজ দুদিন হ’ল তাদের ভোজসভা চলছে। ইতরগুলো সংখ্যায় খুব একটা কম নয়। জুটেছে সম্ভবত কোথাও হানা দেবার উদ্দেশ্যে। তাদের সঙ্গে গাদাবন্দুকও আছে। সনাতন ধর্মবিশ্বাসিদের (রুশ অর্থডক্স খৃষ্টান) নিয়ে হাসিঠাট্টা করছে, ইউক্রেনীয় জাতিকে নিজেদের গোলাম বলে উল্লেখ করছে।… কোন কোন ইহুদীর দাড়ি চেপে ধরে তার অশুদ্ধ কপালে এঁকে দিচ্ছে ক্রুশ চিহ্ন।

গোগলের রচনা ‘তারাস বুলবা’ থেকে উদ্ধৃতিঃ অবশেষে ক্যাম্প-সর্দার এগিয়ে এসে বললেন, নীপার-কসাক মশাইরা, অনুমতি দিন, আমি কিছু বলবো!’ ‘ বলে ফেল!’ ‘আমার মূল কথা, মাননীয় মহাশয়েরা…..কিন্তু হয়ত আপনারা এ বিষয়ে আমার চেয়ে ভালই জানেন….যে নীপার কসাকদের অনেকেই এত ধার করেছেন ইহুদী শুঁড়িদের কাছে….যে কোন শয়তানই এখন তাঁদের আর ধার দেবে না।’

‘এমন দিন আসছে যখন আমাদের পবিত্র গির্জাগুলোও আর আমাদের থাকবে না।’

‘আমাদের থাকবে না?’

‘তাদের ইজারা দেওয়া হয়েছে ইহুদীদের কাছে। ইহুদীকে আগাম টাকা না দিলে কোন উপাসনা হতে পারবে না।’

‘কি বলতে চাস কি?’

‘আর ইহুদী কুকুর যদি তার নোংরা হাত দিয়ে আমাদের পবিত্র ঈস্টার-রুটির উপর ছাপ না দেয়, তা হলে তা উৎসর্গ করা যাবে না।’

‘মিথ্যে বলছে, ভাই সব, আমাদের পবিত্র ঈস্টার রুটিতে নোংরা ইহুদী ছাপ দেবে- এ হতেই পারে না।’

‘শুনুন, শুনুন! …..আরও আছে ঃ ক্যাথলিক পুরুতেরা গাড়ি চড়ে সারা ইউক্রেন ঘুরে বেড়াচ্ছে সেটা বিপদের কথা নয়! বিপদের কথা এই যে তারা গাড়িতে ঘোড়া জুতছে না, জুতছে খাঁটি খৃষ্টানদের (রুশ অর্থডক্স বা সনাতন খৃষ্টান)। শুনুন, এখনও শেষ হয় নি। শোনা যাচ্ছে, ইতিমধ্যে ইহুদী মাগীরা আমাদের পুরুতদের পোশাক দিয়ে তাদের স্কার্ট বানাচ্ছে। ইউক্রেনে এই সব কান্ডকারখানা চলছে, মহাশয়রা! আর আপনারা এখানে জাপোরোজ্য়েতে স্ফূর্তি চালাচ্ছেন……।

‘ফাঁসিতে ঝোলাও সব ইহুদীদের!’ জনতা থেকে চিৎকার উঠলো, ‘পুরুতের পোশাক থেকে ইহুদী মাগীর স্কার্ট করা চলবে না! আমাদের পবিত্র ঈস্টার-রুটিতে তাদের চিহ্ন দেওয়া চলবে না! নীপারের জলে ডুবিয়ে মার এই ইতরদের সবগুলোকে।’

….জনতা ছুটে চললো শহরপ্রান্তে সব ইহুদীকে কেটে ফেরার উদ্দেশ্যে। ইসরায়েলের (ইয়াকুবের) হতভাগ্য সন্তানেরা, তাদের যেটুকু সাহস বাকি ছিল তাও হারিয়ে লুকিয়ে পড়লো ভোদকার খালি পিপেতে, চুল্লির মধ্যে, এমন কি মেয়েদের স্কার্টের ভিতরেও, কিন্তু যেখানেই লুকাক, কসাকেরা তাদের খুঁজে বার করল।’

‘মহামান্য কর্তারা!’ তার সঙ্গীদের দলের ভিতর থেকে করুণ সন্ত্রস্ত মুখে চিৎকার করে উঠলো একজন ইহুদী- লোকটা রোগা ও লম্বা, যেন প্যাঁকাটি।

‘মহামান্য কর্তারা!’ একটি কথা বলতে দিন, মাত্র একটি কথা! আমরা এমন কথা বলব যা এর আগে আপনাদের কেউ কখনও শোনেন নি, খুব গুরুত্বপূর্ণ…..!’ আচ্ছা, বলতে দাও, বললেন বুলবা, অভিযুক্তের কী বলার আছে তা শুনতে তিনি সর্বদা ইচ্ছুক।

‘দয়ালু কর্তামশাইরা!’ ইহুদী বলতে লাগল। ‘ আপনাদের মতো এমন মহাশয় লোক আগে কখনও দেখা যায় নি। ঈশ্বরের দিব্যি, কখনও না। এমন উদার, সৎ ও সাহসী লোক পৃথিবীতে আগে কখনও ছিল না!’ ভয়ে তার কন্ঠ স্তিমিত ও কম্পিত হতে লাগল। ‘নীপার-কসাকদের মন্দ হোক, একথা আমরা কি করে ভাবতে পারি? ওরা আমাদের কেউ নয়, ইউক্রেনের ঐ ইজারাদাররা (ধনী ইহুদীরা)! ঈশ্বরের দিব্যি, আমাদের কেউ নয়। ওরা মোটে ইহুদী নয়, ওরা যে কী তা কেবল শয়তানই জানে। ওরা এমন যে, ওদের মুখে থুতু দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া উচিৎ। এরা সবাই বলবে এ কথা। সত্যি নয় কি, শ্লেমা? তুমি কি বলো, শ্মুল?

‘ঈশ্বরের দিব্যি, সত্যি!’ ভিড়ের ভিতর থেকে উত্তর দিল শ্লেমা ও শ্মুল। দু’জনেরই মাথার টুপি ছিন্নভিন্ন, দু’জনেই বিবর্ণ যেন চিনেমাটি।

‘আপনাদের শত্রুদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ আমাদের কখনও নেই,’ বলতে লাগল ঢ্যাঙা ইহুদী।’

‘আর ক্যাথলিকদের তো আমরা জানতেই চাই না- শয়তান ওদের চোখের ঘুম কেড়ে নিক! আমরা আর নীপার-কসাকরা হলাম সহোদর ভাইয়ের মত…।’

‘কী বললি? নীপার-কসাকরা হল তোদের ভাই! একজন চেচিয়ে উঠল। ওরে পাপী ইহুদী! এ হতেই পারে না! ফেলে দাও ওদের নীপারের জলে, মশাইরা! ডুবিয়ে মারো এই ইতরগুলোকে!’

এই কথাগুলি হ’ল যেন সংকেত। ইহুদীদের ধরে ধরে জলে ফেলা হতে লাগল। চারিদিকে শোনগেল করুণ চিৎকার, কিন্তু ইহুদীদের জুতামোজা পরা পা শূন্যে উঠে দাপাদাপি করছে দেখে কঠোর নীপার-কসাকরা শুধু হাসতে লাগল। হতভাগ্য যে বক্তৃতাকারীটি নিজের বিপদ নিজে ডেকে এনেছে, সে লাফিয়ে এলো তার গায়ের কামিজ ফেলে, তার গায়ে রইল কেবল রঙীন আঁটসাঁট ফতুয়া। সে ছুটে এসে বুলবার পা জড়িয়ে ধরে করুণ স্বরে বলতে লাগলঃ ‘বড় কর্তা, মহামান্য কর্তামশাই! আপনার ভাই, পরলোকগত দোরোশকে আমি জানতাম। সমস্ত বীরদের মধ্যে তিনি ছিলেন রতœ বিশেষ। তুর্কীদের গোলামী থেকে মুক্তির জন্য আমি তাঁকে আটশ’ সেকুইন দিয়েছিলাম।’

‘তুই জানতিস আমার ভাইকে?’ প্রশ্ন করলেন তারাস। ‘ ঈশ্বরের দিব্যি জানতাম! তিনি ছিলেন মহাপ্রাণ ব্যক্তি।’

‘ কি নাম তোর?’

‘ইয়ানকেল।’

তারাস বললেন, ‘আচ্ছা বেশ,’ তার পর কিছুক্ষণ ভেবে তিনি কসাকদের দিকে ফিরে বললেনঃ ‘ ইহুদীটাকে যখন খুশি ফাঁসিতে ঝোলানো যাবে, আপাতত ও আমার কাছে থাক।’

এই বলে তারাস তাকে নিয়ে গেলেন তাঁর নিজের শকটের সারির কাছে, সেখানে তাঁর বাহিনীর কতকগুলো কসাক দাঁড়িয়ে ছিল।

‘ যা, গাড়ির তলায় ঢুকে পড়, শুয়ে পড়,আর নড়াচড়া করিস নে; আর তোমরা ভাইসব, দেখো, ইহুদীটাকে ছেড়ো না।’

…..শহরতলী দিয়ে যেতে যেতে তারাস বুলবা দেখলেন যে তাঁর হতভাগ্য ইহুদী ইয়ান্কেল ইতিমধ্যেই কোনরকমে ছাউনী-সহ এক দোকান খাড়া করেছে, তাতে বিক্রি করছে চকমকি-পাথর, স্ক্রু, বারুদ এবং পথে সৈনিকদের যা যা দরকার হতে পারে সব, এমন কি নানা রকমের রুটিও।

‘ কিশয়তান এই ইহুদীটা!’ তারাস নিজের মনে ভাবলেন এবং ঘোড়ায় চড়ে তার দিকে এগিয়ে এসে বললেনঃ ‘ মূর্খ, এখানে বসে আছিস কেন? তুই কি চাস যে তোকে চড়াইপাখির মত গুলি করা হোক?’ উত্তরে ইয়ান্কেল তাঁর কাছে এগিয়ে এলো, দুই হাতে এমন ইঙ্গিত করল যেন কোন গোপন কথা বলতে চায় ; বললঃ ‘ আপনি কর্তা চুপ করে থাকুন, কাউকে কিছু বলবেন না, কসাকদের মালগাড়ির ভেতরে আমারও একটা গাড়ি আছে, কসাকদের যা কিছু দরকার হতে পারে সব আমি নিয়ে যাচ্ছি, আর পথে আমি তা বেচব এত শস্তায় যা কোন ইহুদী কখনও বেচেনি। ভগবানের দিব্যি, সে আমি করব ; ভগবানের দিব্যি।’ ইহুদীদের হিসাবী স্বভাবে বিস্মিত তারাস….।

পোল সীমান্তে উমান শহর, ইহুদী ইয়ান্কেল, ইতিমধ্যেই সেখানে সে পাট্টাদার ও পানশালার অধিকারী হিসেবে জমিয়ে বসেছে ; একটু একটু করে চারপাশের সব অভিজাত ও ভদ্রলোকদের কব্জা করেছে, একটু একটু করে তাদের সব অর্থ শুষে নিয়েছে এবং স্থানীয় ব্যাপারে তার ইহুদীয় উপস্থিতি টের পাইয়ে ছেড়েছে। তিন মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে একটি কুটিরও সম্পূর্ণ অবস্থায় রইল না, সবই মদের স্রোতে ডুবল, রইল কেবল দারীদ্র আর ছিন্নকন্থা। ইয়ান্কেল যদি আর দশ বছর সেখানে থাকতে পারত তা হলে সে নিশ্চয় সমস্ত এলাকাটিকে উৎসন্ন করে দিত।

আমি তোমার কাছে আসতাম না। হয়ত আমি একাই যেতে পারতাম ওয়ারশতে; কিন্তু ওই হারামজাদা পোলরা আমাকে চিনে ফেলবে। …… মিথ্যারচনায় আমি মোটেই অভ্যস্ত নই। আর তোমরা, ইহুদীরা, এই জন্যই জন্মেছ। তোমরা স্বয়ং শয়তানকেও ঠকাতে পার।

‘ ইহুদী কখনও খালি পিপে বয়ে বেড়ায় না ; নিশ্চয়ই এর মধ্যে আছে কিছু। ধর ইহুদীটাকে, বাঁধ ইহুদীটাকে, কেড়েনাও ইহুদীটার সব টাকাকড়ি, পাঠাও ইহুদীটাকে জেলে!’ কারণ যেখানে যা কিছু অন্যায় হয় তার দোষ পড়ে ইহুদীর ঘাড়ে; কারণ ইহুদীকে সবাই ভাবে কুকুরের মতো; তারা ভাবে যদি কেউ ইহুদী হয় তা হলে সে মানুষই নয়।’

রাস্তার নাম ‘ ময়লা’ বা ‘ ইহুদীরাস্তা’, কেননা এখানে বাস করত ওয়ারশ-শহরের প্রায় সকল ইহুদী।

‘ শোন, ইহুদীরা!’ বললেন তিনি, তাঁর কন্ঠে উল্লাসের আভাস। ‘ তোমরা সবকিছু করতে পার এ পৃথিবীতে, সমুদ্র গর্ভ থেকেও খুঁড়ে বার করতে পার; বহুকাল থেকে কথা চলতি আছে যে ইহুদী ইচ্ছে করলে তার নিজের আত্মাকেই চুরি করতে পারে।’

রাশিয়ায় ইহুদীদের জীবনযাপন জার’র আমল পর্যন্ত এমনই ছিল। কিন্তু এর আমূল পরিবর্তন ঘটে ১৯১৭ সালের মানবতাবাদী বিপ্লবের পর। রাশিয়ার ভূখন্ডে বসবাসরত সকল ইহুদী ও বহিরাগত অন্যান্য সম্প্রদায় তখন মানবিক এবং নাগরীক অধিকার পায়। ইউরোপের বাকি ইহুদী সমস্যর সমাধান হয় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গড়ে ওঠা জার্মানী ও তাদের মিত্রদের তৈরী গ্যাস চেম্বারে!

ইউরোপে ইউক্রেন ছিল ইহুদীদের সবচেয়ে বড় ঘাটি। এই ইহুদীরা ইউক্রেনে একটা শক্তিশালি সম্প্রদায় হিসেবে বাড়তে থাকে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে ইউক্রেন আলাদা রাষ্ট্র হয়। পুঁজি ইহুদীদের কাছে আগেই ছিল, এবার পুঁজি এবং সংখ্যার মেলবন্ধনে শ্লাভজাতির দেশে একজন ইহুদী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়। আর ইহুদী প্রেসিডেন্ট হলেই দেশটা আমেরিকান আর ইসরায়েলের ইহুদীদের সম্পত্তিতে পরিণত হয়ে যায়। যারা তাদের মানবিক-নাগরীক অধিকার দিয়েছিল তাদের তারা গ্রাস করছে। আর যে ইউরোপীয়রা তাদের কোন দিন মানুষ বলেই গন্য করে নি, যে জার্মানরা লক্ষ লক্ষ ইহুদীকে জিবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে সেই জার্মানরাই এখন ইহুদীদের পরম বন্ধু! একেই বলে উপকার করলে তোমার কবর খোড়ার কোদালটাও দিও!

এতো গেলো ইহুদীদের ইউক্রেন ছিনতাই। এটা দেখে বাংলাদেশের শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে। বাংলাদেশেও রহিঙ্গা নামে একটা সম্প্রদায় বাস করছে ইহুদীদের মত আশ্রিত হিসেবে। সেভ্ দ্য চিলড্রেন’র ২০১৮ সালের এক হিসাব অনুযায়ী সে বছর রহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪৮ থেকে ৫০ হাজার শিশু জন্ম নেয়! এভাবে ২০-৩০ বছর পার করতে পারলে দেখা যাবে তাদের সংখ্যা কোটি ছাড়িয়েছে। আর তখন যদি দুই পাশের দুই মিয়াভাই সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় আর যদি ইউরোপ-আমেরিকার মানব দরদীরা উপর থেকে সার-কিটনাশক ছড়ায়, তা হলে ইসরায়েল-ইউক্রেনের মত বাংলাদেশের একটা অংশ নিয়ে ‘পাহাড়ী ফুল’ তারা ফোটাতেই পারবে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন পত্রিকার খবর- ‘রহিঙ্গা শিবিরে ঘরে ঘরে অবৈধ অস্ত্র’ এর মধ্যে আছে গ-১৬, অশ-৪৭ সহ দেশী-বিদেশী মারাত্মক সব অস্ত্র, যার সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০ হাজার! অন্যদিকে, এ অঞ্চলের গভীর জঙ্গল বেষ্টিত বাংলাদেশ-ভারত-চীন সীমান্তজুড়ে কারেন,কাচিন, শান, আরাকানী রহিঙ্গা সহ ৫০টির অধিক বর্মিজ বিদ্রোহী গ্রæপ স্বক্রিয়। এরা সবাই বাংলাদেশে আশ্রিত রহিঙ্গাদের দেশীভাই। এদেরে সাথে যোগ দিয়েছে দেশবিরোধী জামায়াত-জঙ্গি ষড়যন্ত্রিরা, যারা এই পাহাড়ী জঙ্গিদের আই ই ডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ) বোমা বানাতে প্রশিক্ষণ দিয়েছে আর সেই বোমা দিয়ে তারা এখন দেশের বীর সেনানীদের হত্যা করছে। এই জামায়াত-জঙ্গি গ্রæপের সাথে কাজ করছে ইজরায়েলের গোয়েন্দাবাহিনী মোসাদ। আর মোসাদ হ’ল আমেরিকা তথা সিআইএ’র পাচাটা।  আশ্রিত সশস্ত্র রহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা এদের সাথে হাত মিলিয়েছে এবং ট্রেইনিং, অস্ত্র সরবরাহ ও আপৎকালিন আশ্রয় সবই পাচ্ছে এবং এদের বলে বলিয়ান হয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের হত্যা ও আহত করেছে! তাই এই বিষবৃক্ষ এখনই উপড়ে ফেলতে হবে বলে দেশবাসির অভিমত, অন্যথায় উল্লিখিত ‘পাহাড়ী ফুল’ ফোটার দৃশ্য অবলোকনের অপেক্ষায় থাকতে হবে।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ ,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *