১৫ বছর পর আবারও বটিয়াঘাটায় নদী-খাল লিজ নিয়ে ইঁদুর বেড়াল খেলা

খুলনা বটিয়াঘাটা উপজেলার আমতলা ও খড়িয়াসহ সকল নদী-খাল ইজারা বন্ধ এবং নেট-পাটা ও বাঁধ অপসারণ করে কৃষির জন্য উন্মুক্ত জলমহল ঘোষণার দাবী জানিয়েছে স্থানীয় উন্নয়ন সংগঠন লোকজ ও মৈত্রী কৃষক ফেডারেশন।

আজ ৮ জুন কাতিয়ানাংলা লোকজ সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিভাষ মন্ডল লিখিত বক্তব্য পাঠ করে এ দাবী জানান। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করে বক্তব্য রাখেন লোকজ-এর নির্বাহী পরিচালক দেব প্রসাদ সরকার, গঙ্গারামপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শেখ মো: মোশাররফ হোসেন, সেলিনা ইয়াসমিন পলি, মো: মনিরুল ইসলাম, মৈত্রী কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বরীন্দ্রনাথ মণ্ডল, সহসভাপতি দীপ্তি মল্লিক, তাপস মল্লিক, বাসুদেব মন্ডল, প্রসেন বিশ্বাস, আশিষ মণ্ডল, মোস্তাফিজুর রহমান, লোকজ-এর সমন্বয়কারী পলাশ দাশ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে বটিয়াঘাটা উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত আমতলা, খড়িয়া, বটবুনিয়া, বরাখালী, ছোটখড়িয়া, মরাখড়িয়া ও গোন্ধামারী খাল। উল্লেখিত নদী ও খালসমূহ পরস্পর সংযুক্ত, কিন্তু ভিন্ন নামে পরিচিত জলমহল। যা ওয়াপদা বেঁড়িবাধ’র ভিতরে অবস্থিত এবং স্লুইস গেইট সংযুক্ত। উক্ত নদী-খালগুলির মাধ্যমে এলাকার ২৬টি গ্রামের প্রায় ৩৫ হাজার একর ফসলী জমির আবাদ হয় এবং এই জমির পানি নিষ্কাষিতও হয়। এলাকার ৩৫ হাজার অধিবাসীদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ কৃষিজীবি ও মৎস্যজীবি। তারা এই নদী ও খালের পানি ব্যবহার করে আমন, আউশ ও ব্যাপক বোরো ধান, তরমুজ, মিস্টি কুমড়া, তিল, মুগডালসহ সকল ফসল উৎপাদন করে। সারাদিন কাজের পর কৃষকরা এই নদী হতে মাছ ধরে তাদের দৈনন্দিন আমিষের চাহিদা  মেটায়। এলাকার মানুষের জীবন জীবিকার জন্য এই নদী ও খালগুলি একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠেছে। অথচ জলমহলগুলোর মধ্যে আমতলা ও খড়িয়া নদী দুটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অসাধু কর্মচারিদের সাথে স্থানীয় ভুয়া মৎস্যজীবি সমিতির যোগসাজসে ইজারা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। এই ইজারার ফলে সরকার কিছু তাৎক্ষনিক রেভিনিউ পেলেও জিডিপি’তে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশ সরকারের ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল নবম পরিচ্ছেদ-এর ১৮৭, ১৮৮ অনুচ্ছেদ, বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রনালয়ের ২৭ আগস্ট ২০১৪ সালে প্রকাশিত গেজেট জাতীয় চিংড়ি নীতিমালা-২০১৪ এর ৫.২.৪ ও ৫.২.৫ ধারা, জাতীয় সংসদের  স্পীকারের উপানুষ্ঠানিক পত্র নং: বাজাস/স্পীকার/১(১)/ভূমি/০৯/২১৮, জলমহল নীতিমালা ২০০৯ এর ১৫ ধারার ‘ঘ’ উপধারা এবং বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিবেদন পত্র বিবেচনা না করে ইজারা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উল্লেখিত নদী ও খালসমূহ উন্মুক্ত জলাশয়। সরকারের আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী উন্মুক্ত জলাশয় ইজারা প্রদানের বিধান না থাকলেও ভুয়া মৎস্যজীবি সমিতির পক্ষে এলাকায় মাইকিং করে স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবিদের খড়িয়া ও আমতলা নদীতে মাছ ধরা এবং নদীর পানি ব্যবহার করতে নিষেধ করা হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। আগে বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রাম এবং আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রেক্ষিতে দীর্ঘ ১৫ বছর বন্ধ থাকার পর আবারো নতুন করে এই এলাকার নদী-খাল ইজারা প্রদান করা হচ্ছে। এ-যেনো নদী-খাল ইজারার নামে এলাকার জনগণের সাথে ইঁদুর বেড়াল খেলা।

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের কাছে আমতলা ও খড়িয়াসহ বটবুনিয়া, বরাখালী, ছোটখড়িয়া, মরাখড়িয়া ও গোন্ধামারী খালের ইজারা বন্ধ এবং খাল ও নদীর নেট-পাটা ও বাঁধ অপসারণ করে উন্মুক্ত জলাশয় ঘোষণা দাবী করা জানানো হয়েছে।

facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmailby feather
ট্যাগসমূহঃ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Current ye@r *